ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ফুল চাষেই বদলে গেল দেলোয়ারের জীবন

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুল চাষেই বদলে গেল দেলোয়ারের জীবন

হাসিবুল ইসলাম : গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০০৪ সালের ঘটনা। দেলোয়ার ক্ষুদ্র পরিসরে বাবার কাছ থেকে জমানো ৪ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে কিনে আনেন কিছু ফুলের চারা।

এ ঘটনায় পরিবারের সবাই অবাক হয়ে যায়। প্রতিবেশিসহ সবাই তাকে পাগল বলা শুরু করে। তবুও নিরাশ না হয়ে দেলোয়ার তার লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকেন। নিজের শ্রম, অধ্যাবসায় ও মেধার সমন্বয়ে এগিয়ে যান তিনি। মাত্র ৪ হাজার টাকার পুঁজি, আজ দাঁড়িয়েছে কোটি টাকার ওপরে। বর্তমানে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে ফুল বাগান রয়েছে তার। ২০১৭ সালের কৃষিতে সর্বোচ্চ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ পেয়েছেন তিনি।

দেলোয়ার মাধ্যমিক না পেরোতেই কৃষিতে আত্মনিয়োগ করেন। শুরুতে স্বল্পপরিসরে নিজের কৃষি জমিতে দেশীয় গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের চাষ শুরু করে উৎপাদিত ফুল ঢাকার শাহবাগে বাজারজাত করেন। সন্তোষজনক দাম আর ক্রমেই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি তাকে ফুল চাষে আরো উদ্যোগী করে তোলে। শুরু হয় নতুন নতুন ফুল চাষের প্রচেষ্টা।

 



ফুল নিয়ে এখানেই তার কৌতূহল কিংবা বিশ্ব ফুলের বাজার সম্পর্কে জানার আগ্রহ শেষ হয় না। যোগাযোগ শুরু করলেন গাজীপুরের উচ্চশিক্ষিত যারা আন্তর্জাতিক তথ্য সম্পর্কে জানেন তাদের সঙ্গে। তাদের কাছে জানার চেষ্টা করলেন বিশ্বের ফুল উৎপাদনকারী সেরা দেশ সম্পর্কে। জানলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে নেদারল্যান্ড। দেশটি বিশ্বের বায়ান্ন শতাংশ ফুলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ফুল উৎপাদনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কেনিয়া, ইকুয়েডরসহ আফ্রিকার দেশগুলো ফুল চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতেও ব্যাপকহারে ফুল চাষ করা হয়। দেলোয়ার হল্যাল্ডের একজন ফুল চাষির সঙ্গে আলোচনা করেন। তার পরামর্শে ২০০৫ সালে চায়না জার্বেরা ফুলের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।

শুরুতে ভারত থেকে কিছু চারা এনে চাষ শুরু করেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ ফুলের জন্য অনুকূলে না থাকায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত শেড তৈরি করে তার ভেতরে চাষ শুরু হয়। প্রথম থেকেই ভালো ফলনও হয়। কিছুদিন পর জার্বেরার সঙ্গে চায়না বড় জাতের গোলাপ চাষ শুরু করেন। ২০১২ সালের দিকে তিনটি বড় খামারে ১৮ বিঘা জমিতে বিশাল পরিসরে শুরু করেন জার্বেরা ও গোলাপ চাষ। ফুল চাষের বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্ত করতে তিনি বেশ কয়েকবার বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। চীনের একটি ফুল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন তিনি।

দেলোয়ার বলেন, জার্বেরা ফুলের একটি চারা থেকে টানা ৩ বছর ফুল পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ৩ বছরে প্রায় ১০০ ফুল উৎপাদিত হয়, যার প্রতিটির দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে তার বাগানে ২২০০ জার্বেরা ফুল উৎপাদনক্ষম চারা রয়েছে। সঙ্গে চায়না বড় জাতের গোলাপের চারা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। সবমিলিয়ে তার বাগান থেকে বছরে অন্তত ১৮ লাখ টাকা আয় হয়।

 



দেলোয়ারের স্বপ্ন এখন আরো বড়। এবার তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন মডেল নার্সারি গড়ে তোলার। যেখানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে চান। দেলোয়ারের খামারে বর্তমানে চারজন নারী ও ১৩ জন পুরুষ কাজ করেন।

ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শিউলী আক্তার লেখাপড়া শেষ করে দেলোয়ারের কৃষি খামারের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন ৫ বছর ধরে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে কৃষি খামারে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম বন্ধু-বান্ধবীরা তাকে কটূক্তি করলেও ভালো বেতনে তিনি তার কাজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। খামারে কাজ করে যে নিজের ক্যারিয়ার গড়া যায় এটাই তার প্রমাণ।

জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর দেলোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করবেন চিন্তাও করতে পারেননি। একজন কৃষক হিসেবে জাতীয় পুরস্কারের মধ্য দিয়ে তার কর্মস্পৃহা ও দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। প্রথম প্রথম সবাই তাকে পাগল অভিহিত করলেও এখন সবাই তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। এটাই তার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুয়িদুল হাসান বলেন, দেলোয়ার একজন সফল ফুল চাষি। তার অনুপ্রেরণা নিয়ে তরুণরা এগিয়ে আসলে বেকার সমস্যা দূর হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসিবুল/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়