ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘুমের মধ্যে যেসব চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০২, ৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘুমের মধ্যে যেসব চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্রামের জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন ঘুমের সময় আপনার শরীরে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে? এসব ঘটনার কিছুটা সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন এবং বাকিটা সম্পর্কে হয়তো এখনো অজানাই রয়ে গেছে। ঘুমের সময় শরীরে ঘটে এমন কিছু ঘটনা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* আপনি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন
ঘুমের সময় প্রধানত দুই ধরনের স্বপ্ন দেখা হয়: র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম স্লিপ) এবং নন-র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (এনআরইএম স্লিপ)। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ডিভিশন অব স্লিপ মেডিসিন অনুসারে, ‘আরইএম স্লিপ হলো ঘুমের সেই পর্যায় যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, এ পর্যায়ে নন-আরইএম স্লিপের তুলনায় মস্তিষ্ক জুড়ে অধিকাংশ নিউরনের ফায়ারিং রেট বৃদ্ধি পায়।’ আরইএম স্লিপের সময় মস্তিষ্কের সক্রিয়তা যখন আমরা জেগে থাকি তার চেয়ে বেশি। হার্ভার্ড প্রতিবেদন করেছে যে, যখন লোকজন আরইএম স্লিপের মাঝখানে জেগে ওঠেছিল তারা তাদের দেখা স্বপ্ন ভালোভাবে মনে করতে পেরেছিল, যার মানে হলো তারা ভিভিড ড্রিম বা প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তারা নন-আরইএম স্লিপের সময় প্রাণবন্ত বা স্পষ্টভাবে স্মরণযোগ্য স্বপ্ন তেমন একটা দেখেননি বলে জানান। সম্ভবত আরইএম স্লিপের সময় মস্তিষ্কের সক্রিয়তার প্যাটার্ন প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখতে সহায়তা করে।

* আপনি পুনরাবৃত্তিমূলক স্বপ্ন দেখেন
ঘুমের সময় কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা ছাড়াও আপনি পুনরাবৃত্তিমূলক স্বপ্ন দেখতে পারেন। সাইকোলজি টুডের প্রতিবেদন অনুসারে, ‘৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুনরাবৃত্তিমূলক স্বপ্ন দেখে থাকেন। তারা অভিযোগ করেন যে, এসব স্বপ্নের বেশিরভাগই জীবনের অমীমাংসিত সমস্যা ও বিবাদ বিষয়ক।’ কিন্তু সকল পুনরাবৃত্তিমমূলক স্বপ্ন নেতিবাচক নয়, হাফিংটন পোস্ট ডটকমকে বলেন অ্যাঞ্জেল মরগান।

* আপনি অনুভব করেন যে পড়ে যাচ্ছেন
এ ধরনের অচেতন ঝাঁকুনিকে বলে হিপনিক জার্ক এবং ৭০ শতাংশ লোকের মাঝেমাঝে এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়। কেউ নিশ্চিতভাবে জানেন না যে কেন এমনটা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের একটি তত্ত্ব হলো- নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রের প্রাকৃতিক অবনতির কারণে ঘুমের সময় কেউ অনুভব করতে পারেন যে তিনি কোথাও থেকে পড়ে যাচ্ছেন। অন্য একটি তত্ত্বের দাবি হলো, আপনার মাংসপেশির শিথিলতায় মস্তিষ্কের কাছে ভুল সংকেত আসতে পারে যে আপনি আসলেই পড়ে যাচ্ছেন। ক্যাফেইন, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ও ঘুমের ঘাটতি হিপনিক জার্কের পুনরাবৃত্তির হার বাড়াতে পারে।

* আপনি ঘুমে হাঁটতে পারেন
এনআরইএম স্লিপের গভীরতম পর্যায়ে স্লিপওয়াকিং বা ঘুমে হাঁটার ঘটনা ঘটতে পারে। ঘুমচক্রের এ অংশটি আপনাকে অসুস্থ বা দুর্বল করতে পারে যদি আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় জেগে ওঠে হাঁটতে থাকেন। এখনো পর্যন্ত কেউ ঘুমে হাঁটার প্রকৃত কারণ প্রমাণ করতে পারেননি। কিছু বিজ্ঞানীর অভিমত এই যে, কেউ তখনই ঘুমে হাঁটে যখন তার মস্তিষ্ক ঘুমের স্বাভাবিক চক্রকে উপেক্ষা করে গভীরতম এনআরইএম স্লিপ থেকে সরাসরি জেগে ওঠতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন উল্লেখ করেছে যে স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, অ্যালকোহল, জ্বর ও ঘুমের ঘাটতি ঘুমে হাঁটার কারণ হতে পারে। বংশগত কারণেও কেউ ঘুমে হাঁটার প্রবণতা অর্জন করতে পারে।

* আপনি ঘুমে কথা বলতে পারেন
স্লিপ টকিং বা ঘুমে কথা বলাকে বলে সমনিলোকি, যা আরইএম স্লিপ এবং এনআরইএম স্লিপ উভয় পর্যায়েই ঘটতে পারে। সাধারণত ঘুমের সময় মুখ ও স্বরতন্ত্রী নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু কখনো কখনো এসবকিছু সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে যেতে পারে এবং ঘুম বিশেষজ্ঞরা এটাকে বলেন মোটর ব্রেকথ্রু- এসময় আপনি নিজের অজান্তে উচ্চস্বরে কথা বলতে পারেন। ঘুমের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যাওয়ার সময়ও আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় কথা বলতে পারেন। ক্রনিক স্লিপিং টকিং বা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ঘুমে কথা বলাকে ঘুমের ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও স্পোরাডিক স্লিপ টকিং বা মাঝেমাঝে ঘুমে কথা বলা খুব কমন।

* আপনার কিডনির কার্যক্রম ধীর হয়
ঘুমের সময় অনেক শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম, যেমন- কিডনি ফাংশন, ধীর হয়ে যায়। এর ফলে মূত্র উৎপাদন কমে যায়, একারণে আপনাকে সচরাচর ঘুমের মাঝে ওঠে বাথরুমে যেতে হয় না। অন্যদিকে মধ্যরাতে মূত্রত্যাগের জন্য জেগে ওঠা ডায়াবেটিস অথবা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গ হতে পারে।

* আপনার বেশি গ্যাস হয়
ঘুমের সময় আপনার পায়ুপথ দিয়ে বেশি বায়ু নির্গত হয়, কারণ এ সময় মাংসপেশি শিথিল থাকে- যার মধ্যে আপনার অ্যানাল স্ফিংকটার বা মলদ্বারের মাংসপেশিও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি আপনি এবং আপনার সঙ্গীকে বিরক্ত করে না, কারণ আপনারা উভয়েই ঘুমে থাকেন এবং ঘুমের সময় ঘ্রাণশক্তি কমে যায়।

* আপনার ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পায়
একারণে ফায়ার অ্যালার্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, কারণ ঘুমের সময় ধোয়ার ঘ্রাণ ভালোভাবে অনুভব করা যায় না। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোলাহল বা শব্দ ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু ঘ্রাণ তা করতে পারে না।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন : * ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর

* ঘুমের সময় কতো ক্যালরি পোড়ে






 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়