ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লিউকেমিয়ার নীরব উপসর্গ (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১২, ৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লিউকেমিয়ার নীরব উপসর্গ (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : লিউকেমিয়া হলো রক্ত ও অস্থিমজ্জার একটি ক্যানসার। এ ক্যানসারে রক্তকোষ অস্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত হয়। যেহেতু অস্বাভাবিক রক্তকোষ সুস্থ রক্তকোষের স্থান দখলে নেয়, তাই রক্তের কার্যক্রমে ত্রুটি দেখা দেয় এবং শারীরিক উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে এ রোগ দ্রুত অগ্রসর হয়, অন্যদিকে ক্রনিক লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে এ রোগ ধীরে অগ্রসর হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অনুসারে। অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ও ক্রনিক লিউকেমিয়া উভয়ের উপসর্গ একই হতে পারে। সারা শরীরে ছোট ও বিস্ময়কর উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে।

লিউকেমিয়ার ১৬ উপসর্গ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব। এগুলোর মধ্যে থেকে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তা ডাক্তার দ্বারা মূল্যায়ন করানো উচিত।

* জ্বর বা শীতলতা

জনস হপকিন্স সিডনি কিমেল কম্প্রিহেনসিভ ক্যানসার সেন্টারের লিউকেমিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মার্ক লেভিস বলেন, ‘জ্বরজ্বর ভাব অথবা শীত শীত অনুভূতি হলো লিউকেমিয়ার অন্যতম সর্বাধিক কমন উপসর্গ। এক-চতুর্থাংশ অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার রোগীদের এ উপসর্গ থাকতে পারে এবং ক্রনিক লিউকেমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গ সাধারণত দেখা দেয় না।’ ঘনঘন নিম্নমাত্রার জ্বর প্রায়ক্ষেত্রে কোনো ইনফেকশন ও দুর্বল ইমিউন সিস্টেম নির্দেশ করতে পারে, যার সঙ্গে লিউকেমিয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে।

* রাতে ঘাম নিঃসরণ
প্রায়ক্ষেত্রে লিউকেমিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইনফেকশন দ্বারা রাতে ঘাম নিঃসরণ হয়ে থাকে। ক্যানসার ট্রিটমেন্ট সেন্টারস অব আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব মেডিক্যাল অনকোলজির সভাপতি এবং ইস্টার্ন রিজিওনাল মেডিক্যাল সেন্টারের মেডিক্যাল অনকোলজির প্রধান পামেলা ক্রিলি বলেন, ‘ঘামে আপনার শরীর ও বিছানার চাদর ভিজে যাবে। এটি হলো এমন একটি উপসর্গ যার কারণ খোঁজা প্রয়োজন।’

* মাথায় ধবধবে ব্যথা
যদিও কমন নয়, কিন্তু ঘনঘন ধবধবে মাথাব্যথা হতে পারে লিউকেমিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অ্যানিমিয়া অথবা মস্তিষ্কের ভেতর জীবননাশক রক্তক্ষরণের একটি লক্ষণ।

* অত্যধিক বিবর্ণতা
মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্টের মতো ত্বকের অস্বাভাবিক বিবর্ণতাও অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ও কখনো কখনো ক্রনিক লিউকেমিয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে। ডা. লেভিস বলেন, ‘অগ্রসর পর্যায়ের লিউকেমিয়ার রোগীদের ত্বক খুব বিবর্ণ দেখায়। তারা ইতোমধ্যে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভব করে থাকে। যদি আপনার ত্বককে বিবর্ণ করার মতো লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি থাকে, তাহলে রুমের ভেতর শ্বাসকার্য চালানো কঠিন হবে।’

* হাড়ে ব্যথা

হাড়ে ব্যথা কমন উপসর্গ না হলেও এটি হলো ক্রনিক লিউকেমিয়া ও অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার একটি স্পষ্ট লক্ষণ, বলেন ডা. লেভিস। অস্থিমজ্জার ভেতর লিউকেমিক কোষ গঠিত হয়, তাই হাড়ে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে মেডিক্যাল সেবার অনুসন্ধান করাই সর্বোত্তম।

* লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
আপনার ঘাড়, বগল ও কুঁচকি অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য স্ফীত ও ব্যথাবিহীন লসিকাগ্রন্থি আছে কিনা চেক করুন। ইনফেকশনের সময় এসব গ্রন্থি বড়-ছোট হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু তারা ফুলে গেলে অথবা বড় হতেই থাকলে তা হতে পারে লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমার অন্যতম উপসর্গ, বলেন ডা. ক্রিলি।

* ত্বকে র‍্যাশ
প্রতি ২০ জন রোগীর মধ্যে আনুমানিক একজনের ত্বকে র‍্যাশ হতে পারে, যা দুটি শ্রেণীর একটিতে পড়ে: ত্বকের লিউকেমিয়া অথবা সুইট’স সিন্ড্রোম দ্বারা সৃষ্ট র‍্যাশ, যার সঙ্গে লিউকেমিয়ার যোগসূত্র রয়েছে, বলেন ডা. লেভিস। তিনি যোগ করেন, ‘ত্বকের লিউকেমিয়া দেখলে মনে হবে যে ত্বকের নিচে একটি পিণ্ড রয়েছে। একটি ছোট পিণ্ড বিকশিত হয়। কখনো কখনো এটি প্লেকের মতো হতে পারে। অন্যদিকে সুইট’স সিন্ড্রোম র‍্যাশ দেখতে লাল ও বীভৎস, যা অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের অনুরূপ।’ লিউকেমিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত র‍্যাশের আকার-আকৃতি যেমনই হোক না কেন, তাদের মধ্যে একটি বিষয় কমন: তারা বিকশিত হতে থাকে এবং ছড়াতে থাকে।

* ঘনঘন বা পুনরাবৃত্তিমূলক ইনফেকশন
আপনার ছোটখাট কোনো ইনফেকশন লেগে থাকলে অথবা ঘনঘন বা পুনরাবৃত্তিমূলক ইনফেকশন হলে শ্বেত রক্তকণিকা, হিমোগ্লোবিন ও প্লাটিলেটের সংখ্যায় অস্বাভাবিকতা আছে কিনা শনাক্ত করতে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টের (সিবিসি) প্রয়োজন হবে। অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ঘনঘন ইনফেকশন হয়ে থাকে অথবা আপনার সবসময় ফ্লু বা ইনফেকশনের প্রান্তে আছেন বলে অনুভব হতে পারে। এর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণ জুটি বাঁধতে পারে, যেমন- ক্লান্তি বা কালশিটে। এমনটা হলে ডাক্তার দ্বারা মূল্যায়ন করাতে কোনোমতেই বিলম্ব করা উচিত নয়। ডা. লেভিস বলেন, ‘লিউকেমিয়া সবসময় একটি চমক, এটি আপনার অলক্ষ্যে বিকশিত হয়ে আপনাকে চমকে দিতে পারে।’ যেহেতু লিউকেমিয়া রোগীদের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পেতে দেরি হতে পারে অথবা গোপন থাকতে পারে অথবা অন্যান্য অসুস্থতার উপসর্গের অনুরূপ উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তাই শারীরিক পরীক্ষা, রক্তের উপাদান সংখ্যা বা ব্লাড কাউন্ট ও অস্থিমজ্জার বায়োপসি করা গুরুত্বপূর্ণ, যা সঠিক ধরনের লিউকেমিয়া নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

         * রক্ত জমাটবদ্ধতার ৭ নীরব লক্ষণ

         * রক্তস্বল্পতার ১০ উপসর্গ

         * ব্লাড প্রেসার মাপায় ভুল হওয়ার ৯ কারণ

         * যে ১৩ কারণে রক্তদান করা যায় না

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়