ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ব্লাড প্রেসার কমে গেলে কী করবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ব্লাড প্রেসার কমে গেলে কী করবেন?

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ সবসময় সমস্যার লক্ষণ নয়। কিন্তু আপনার লো ব্লাড প্রেসার থাকলে একজন চিকিৎসক এ দশাটি শনাক্ত করতে পারেন এবং এর কারণও উন্মোচন করতে পারেন। আপনার ব্লাড প্রেসার কমে গেলে এবং সেইসঙ্গে মাথাঘোরা ও মূর্ছা যাওয়া বা চেতনা হারানোর অনুভূতি থাকলে এ দশাকে পোস্টুরাল হাইপোটেনশন বলে। আরো অনেক অনির্ণীত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও এসব উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। একারণে সঠিক চিকিৎসার জন্য লো ব্লাড প্রেসারের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসক আপনার মেডিক্যাল ইতিহাস, বয়স ও নির্দিষ্ট উপসর্গ জানতে চাইবেন এবং কোন কোন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে পারে তা বিবেচনা করবেন। তিনি আপনাকে শারীরিক পরীক্ষা দিতে পারেন এবং ব্লাড প্রেসার ও পালস রেটের চেকিং রিপিট করতে পারেন- শোয়ার কয়েক মিনিট পর, ওঠে দাঁড়ানোর পরপরই এবং শান্তভাবে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে।

আপনাকে অন্যান্য টেস্টও করতে হতে পারে, যেমন- হার্ট রেট ও রিদম মাপতে ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) এবং হার্টের ভেতরকার অবস্থা দেখতে ইকোকার্ডিওগ্রাম নামক আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট। আপনার রক্তস্বল্পতা অথবা রক্ত শর্করার মাত্রা জনিত সমস্যা আছে কিনা দেখতে রক্ত পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

আসে-যায় ধরনের হার্টের সমস্যা অথবা অনিয়মিত হার্টবিট চেক করতে হোম ইসিজি মনিটরিংয়ের (হোল্টার মনিটর বা ইভেন্ট মনিটর) প্রয়োজন পড়তে পারে- এসব সমস্যায় ব্লাড প্রেসার হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। একটি এক্সারসাইজ স্ট্রেস টেস্ট অথবা ইলেক্ট্রোফিজিওলজি টেস্টও (ইপি টেস্ট) সহায়ক হতে পারে।

কিছু পোস্টুরাল হাইপোটেনশনে ‘টিল্ট টেবল’ টেস্ট প্রয়োজন হতে পারে। এই টেস্টে অবস্থানের পরিবর্তনে শরীরের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করা হয়। এই টেস্টের জন্য একজন ব্যক্তিকে একটি টেবিলে শুয়ে থাকতে হয় (শরীরকে বেল্ট দিয়ে টেবিলের সঙ্গে বেধে রাখা হয়) এবং টেবিলটিকে খাড়াভাবে তোলা হয় (এক ঘন্টা পর্যন্ত)। এসময় ব্লাড প্রেসার, হার্ট রেট ও উপসর্গ রেকর্ড করা হয়।

* ব্লাড প্রেসার কমে গেলে করণীয় কী?

অনেক লোকের ক্রনিক লো ব্লাড প্রেসার ডায়েট ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এনে কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা যায়। আপনার উপসর্গের কারণের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক ব্লাড প্রেসার বাড়াতে যেসব পরামর্শ দিতে পারেন তা হলো:

* অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খান।

* প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন, অ্যালকোহল নয়।

* অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান সীমিত করুন।

* গরম আবহাওয়া ও ভাইরাস জনিত অসুস্থতায় (যেমন- ঠান্ডা ও ফ্লু) বেশি পরিমাণে তরল পান করুন।

* শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।

* শোয়া বা বসা থেকে ওঠার সময় সতর্ক থাকুন। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে ওঠে দাঁড়ানোর আগে পা ও গোড়ালি কয়েকবার নাড়াচাড়া করুন। তারপর ধীরে ধীরে ওঠার চেষ্টা করুন। বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ানোর পূর্বে বিছানার কিনারায় কয়েক মিনিটের জন্য সোজা হয়ে বসে থাকুন।

* রাতে বিছানার হেডের নিচে ইট বা ব্লক রেখে বিছানার হেডকে উঁচু করুন।

* ভারী কিছু উত্তোলন করবেন না।

* টয়লেট করার সময় চাপ প্রয়োগ করবেন না।

* নড়াচড়া ছাড়াই কোনো স্থানে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

* দীর্ঘসময় উষ্ণ পানির সংস্পর্শে থাকবেন না, যেমন- হট শাওয়ার ও স্পা। মাথা ঘোরালে বসে পড়ুন। বসে থাকার প্রয়োজনে শাওয়ারে একটি চেয়ার বা স্টুল রাখুন। ইনজুরি প্রতিরোধের জন্য শাওয়ার ও বাথ টাবের জন্য তৈরিকৃত ননস্লিপ চেয়ার বা স্টুল ব্যবহার করুন।

* লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যা এড়াতে ও খাবার খাওয়ার পর মাথাঘোরার পর্ব কমাতে ঘনঘন অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কার্বোহাইড্রেটের খাবার কমিয়ে ফেলুন। খাওয়ার পর বিশ্রাম নিন। খাবার খাওয়ার পূর্বে ব্লাড প্রেসার কমাতে ওষুধ সেবন করবেন না।

* প্রয়োজনে ইলাস্টিক সাপোর্ট (কম্প্রেশন) স্টকিংস ব্যবহার করুন, যা চরণ থেকে উরু পর্যন্ত আবৃত করে। এটি পায়ে রক্তপ্রবাহ সীমিত করতে সাহায্য করে- এভাবে শরীরের ওপরের অংশে অধিক রক্তপ্রবাহ হবে।

লো ব্লাড প্রেসারের ওষুধ

উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো আপনার সমস্যা উপশম করতে না পারলে ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি করতে প্রায়সময় যে দুটি ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা হলো: ফ্লুড্রোকরটিসোন ও মিডোড্রাইন।

* ফ্লুড্রোকরটিসোন: এ ওষুধটি অধিকাংশ টাইপের লো ব্লাড প্রেসারে সহায়ক হতে পারে। এটি শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে (সোডিয়াম রিটেনশন) তরল জমায় (ফ্লুইড রিটেনশন) ও কিছু ফোলা সৃষ্টি করে, যা ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই সোডিয়াম রিটেনশন পটাশিয়াম ঘাটতির কারণ হতে পারে, তাই ফ্লুড্রোকরটিসোন ব্যবহারকালে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পটাশিয়ামের প্রয়োজন হয়। ফ্লুড্রোকরটিসোনে করটিসোন অথবা প্রেডনিসোনের কোনো প্রদাহবিরোধী উপাদান নেই এবং এটি অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের মতো পেশি গঠন করে না।

* মিডোড্রাইন: এ ওষুধটি ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি করতে ছোট ছোট ধমনী ও শিরার ওপরকার রিসেপটরকে সক্রিয় করে। মিডোড্রাইন স্নায়ুতন্ত্রের বিঘ্নিত কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পোস্টুরাল হাইপোটেনশনের লোকদের স্ট্যান্ডিং ব্লাড প্রেসার (দাঁড়ানো অবস্থায় রক্তচাপ) বৃদ্ধি করতে পারে।

তথ্যসূত্র : ওয়েব এমডি

পড়ুন :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়