ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

পানিতে সন্তান জন্মদান কতটা নিরাপদ?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পানিতে সন্তান জন্মদান কতটা নিরাপদ?

প্রতীকী ছবি

পানির মধ্যে শিশুর জন্ম দেয়ার পদ্ধতিকে ওয়াটার বার্থ বলা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শিশুর জন্ম দেয়ার চেয়ে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ওয়াটার বার্থ প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং আরামদায়ক। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদান সত্যিই কি নিরাপদ?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন গবেষণা বলছে, ওয়াটার বার্থ নবজাতকের জন্য নরমাল ডেলিভারির মতোই নিরাপদ। ওয়াটার বার্থ পদ্ধতিতে কুসুম গরম পানিতে প্রায় কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে সন্তান জন্মদান করানো হয়। এ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু কিছু দেশে এ পদ্ধতি এখনো বিতর্কিত; এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের অনেক চিকিৎসক, ধাত্রী এবং হাসপাতাল এই পদ্ধতি সমর্থন করছে না।

বাথটাবে বাচ্চা প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন সাধারণত নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। এতে সময় কম লাগতে পারে এবং প্রসব বেদনা হ্রাস পেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, পানির নিচে বাচ্চা জন্মানো হচ্ছে ভিন্ন একটি বিষয়। যদিও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে বড় পরিসরে গবেষণা হয়নি। বেশিরভাগ গবেষণাই ছিল পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত।।

এ বিষয়ে সম্পাদিত অতীতের অধিকাংশ গবেষণা ইউরোপে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগুলো জোরালো নয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই বলে এখনো সেদেশে সকল ম্যাটারনিটি কেয়ার ফ্যাসিলিটিজের মধ্যে ওয়াটার বার্থ নির্বাচনের হার ১০ শতাংশেরও কম।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের গবেষকরা ৩৯৫টি ওয়াটার বার্থ ও ২,০২৫টি ল্যান্ড বার্থ (নরমাল ডেলিভারি) বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা মা অথবা নবজাতকের ঝুঁকির মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাননি। বাচ্চা প্রসব সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত গবেষক লিসা কেন লউ বলেন, ‘সঠিক উপায় অনুসরণ করলে ওয়াটার বার্থে বাড়তি ঝুঁকি নেই। বরং এতে আরো ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’

যদিও এসব সন্তানসম্ভবা নারীদের ইনফেকশন অথবা নাভিরজ্জু ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি থাকতে পারে। কিন্তু এসব ঝুঁকি নিয়ে অত বেশি দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। চীন, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপে সম্পন্ন গবেষণা অনুসারে এটা বলা যায় যে, সঠিক উপায় অবলম্বনে ওয়াটার বার্থের ঝুঁকি প্রায় সম্পূর্ণরূপে দূর করা যায়। মায়ের বয়স, কতক্ষণ ধরে পুশ করা হয়েছে, শিশুর আকার ও পজিশনের ওপর ভিত্তি করে প্রসবের পর প্রজননাঙ্গ ছেঁড়ার মাত্রা কমবেশি হতে পারে। কিছু গবেষণায় ওয়াটার বার্থ ও ল্যান্ড বার্থে প্রজননাঙ্গে ছেঁড়ার মাত্রায় তারতম্যও পাওয়া যায়নি। তারপরও প্রসবের কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো তা নিশ্চিত করে বলা বেশ কঠিন।।

দক্ষিণ আফ্রিকার একটি অপ্রকাশিত গবেষণায় ৬০ জন নারী পানিতে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। এসব নারীদের প্রসবজনিত ব্যথা নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া মায়েদের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু উভয় গ্রুপের নারীদের বার্থ ক্যানালে ছেঁড়ার মাত্রায় পার্থক্য দেখা যায়নি।

ওয়াটার বার্থ ঝুঁকি মনে করে নারীরা এ প্রক্রিয়ায় যেতে চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক। একারণে সন্তানসম্ভবা মায়েদের এ পদ্ধতি নির্বাচনে উৎসাহিত করতে আরো গবেষণা কিংবা প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, এ বিষয়ে গবেষকরা গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন।।
 


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়