ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাংসপেশির ক্ষয় এড়াতে পাঁচ পরামর্শ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাংসপেশির ক্ষয় এড়াতে পাঁচ পরামর্শ

আমাদের পেশিতন্ত্র বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি নিয়ে গঠিত, যাদের প্রত্যেকটি শরীরের কার্যক্রম সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মাংসপেশি আমাদেরকে চলাফেরা করতে, কথা বলতে ও খাবার চাবাতে সহায়তা করে। হৃদস্পন্দন, শ্বাসক্রিয়া ও হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও দৃষ্টিশক্তিও পেশিতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। পেশিতন্ত্রে ৬০০ এরও বেশি মাংসপেশি রয়েছে। শরীরের পুরো ফাংশন সচল রাখতে এসব মাংসপেশি একত্রে কাজ করে।

কিন্তু আমাদের লাইফস্টাইলে কিছু করণীয় না মানলে পেশিতন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে অথবা মাংসপেশির ঘনত্ব কমে যেতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া সহজেই অনুভব করা যায়। এখানে মাংসপেশির ক্ষয় এড়াতে পাঁচটি পরামর্শ দেয়া হলো।

হালকা ভারোত্তোলন করুন: মাংসপেশিকে উজ্জীবিত অথবা পুনরুদ্ধার করার চাবিকাঠি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্স ট্রেইনিং বা ভারোত্তোলন সংক্রান্ত এক্সারসাইজ। অ্যাবটের রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান টিফানি ডিউইক বলেন, এক্সারসাইজ সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমরা একটি জরিপ চালিয়েছিলাম। অধিকাংশ মানুষ জানান যে তারা কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ করেন। মাত্র এক-চতুর্থাংশ লোকজন ভারোত্তোলন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, রেজিস্ট্যান্স ট্রেইনিং করলে মাংসপেশি ঠিক থাকে।

নিয়মিত হালকা ভারোত্তোলন করুন। এ এক্সারসাইজ সহজ হয়ে আসলে রেপ ও ভার বৃদ্ধি করুন। পুরো শরীরের ওপর ফোকাস করুন। আপনার বাহু, বুক, পিঠ, পা ও পেট এক্সারসাইজের আওতায় আসছে কিনা খেয়াল রাখুন। এর পাশাপাশি যোগব্যায়াম ও পাইলেটস করতে ভুলবেন না।

প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ান: অ্যাবট-এএআরপি জরিপে ৬২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক লোক মনে করতেন যে তারা পর্যাপ্ত প্রোটিন খাচ্ছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন যে তারা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, এ জরিপের মাত্র ১৭ শতাংশ লোক জানতেন যে তাদের কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মধ্যবয়স্ক ও তদোর্ধ্ব বয়সি লোকদের জন্য প্রতিদিন কতটুকু প্রোটিন দরকার? শরীরের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম প্রোটিন খেলে সবচেয়ে ভালো হয় (উদাহরণস্বরূপ, শরীরের ওজন ১৫০ পাউন্ড হলে ১০২ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হবে)। সাধারণত ৫০ বছরের কম বয়সি লোকদের জন্য দৈনিক সুপারিশকৃত প্রোটিনের পরিমাণ হচ্ছে, শরীরের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ০.৬ থেকে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন। ডা. ডিউইট প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রতিবেলায় সমান পরিমাণে প্রোটিন খান: প্রতিদিন যতটুকু প্রোটিন দরকার তা একবেলাতে সবটুকু না খেয়ে তিন বেলাতে বণ্টন করে ভারসাম্য আনুন। এতে মাংসপেশির আরো বেশি উপকার হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব লোক তিনবেলার (ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার) প্রতিবেলাতে সমান পরিমাণে বা ৩০ গ্রাম করে প্রোটিন খেয়েছিলেন তাদের মাসল প্রোটিন সিন্থেসিস ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। মাসল প্রোটিন সিন্থেসিস হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে মাংসপেশির ড্যামেজ মেরামত করতে প্রোটিন উৎপন্ন হয়। এ গবেষণার অন্য গ্রুপের লোকেরা ব্রেকফাস্টে ১১ গ্রাম, লাঞ্চে ১৬ গ্রাম ও ডিনারে ৬৩ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করেছিলেন।

খাদ্যতালিকায় ডালিম রাখুন: প্রতিদিন একটি করে ডালিম খেলে মাংসপেশির ক্ষয় প্রতিরোধ হবে? সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এটা সত্য হতে পারে। যদিও অন্য প্রাণীর ওপর চালানো গবেষণায় ডালিমের এ ধরনের উপকারিতা পাওয়া গেছে, কিন্তু নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা সাজেস্ট করছে যে এ সুপার ফ্রুট মানুষের মাংসপেশির সুস্বাস্থ্যেও অবদান রাখতে পারে। এ গবেষণার বিজ্ঞানীরা ডালিমে এমন একটা অণু পেয়েছেন যা মাংসপেশিকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিসফাংশন থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। বর্তমানে মানুষের ওপর এ বিষয়ক গবেষণা চলমান রয়েছে, কিন্তু আমরা এখন থেকেই আমাদের ডায়েটে ডালিমকে জায়গা দিতে পারি।

সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসুন: আপনার শরীর ও আত্মা উভয়ের জন্য সূর্যের আলো ভালো। গবেষণায় পাওয়া গেছে, সূর্যালোকে থাকলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা মাংসপেশির দুর্বলতা কাটাতে সহায়তা করে। বিপরীতভাবে, ভিটামিন ডি এর অভাবে মাংসপেশির ক্ষয় হয়ে থাকে। তাই আপনার মাংসপেশির সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে প্রতিদিন কিছুটা সময় শরীরে সূর্যালোক লাগান, অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য হলেও। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা সূর্যের নিচে থাকবেন না, এতে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়