ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পেটের স্ট্রোক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পেটের স্ট্রোক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আমরা জানি যে স্ট্রোক মস্তিষ্কে হয়, কিন্তু এটা জেনে অবাক হতে পারেন যে স্ট্রোকের মতো একটি সমস্যা পেটেও হয়। এ সমস্যাটিকে ইস্কেমিক কোলাইটিস বলে।

ইস্কেমিক কোলাইটিসকে রূপকার্থে পেটের স্ট্রোক বলা যায়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত লিনক্স হিল হসপিটালের প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগ কর্মসূচির পরিচালক অরুণ স্বামীনাথ বলেন, ‘ইস্কেমিক কোলাইটিস হচ্ছে এক প্রকারের স্ট্রোক, যেটা মস্তিষ্ক অথবা হার্টের পরিবর্তে অন্ত্রকে আক্রান্ত করে।’

কোলন বা বৃহদান্ত্রে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে ইস্কেমিক কোলাইটিস হয়। সাধারণত রক্তনালীগুলো সরু হয়ে গেলে অথবা সেগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এ সমস্যাতে কোলন ড্যামেজ হতে পারে। কোলনের যেকোনো অংশ আক্রান্ত হতে পারে। এখানে পেটের স্ট্রোক বা ইস্কেমিক কোলাইটিসের উপসর্গ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হলো।

নিম্ন রক্তচাপ: সম্ভবত অবগত আছেন যে, উচ্চ রক্তচাপে উল্লেখ করার মতো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। একারণে এটাকে নীরব ঘাতক বলা হয়ে থাকে। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপের বৈশিষ্ট্য এর বিপরীত, এটি কিছু স্পষ্ট লক্ষণ নিয়ে হাজির হয়। নিম্ন রক্তচাপে মাথা ঘোরাতে পারে ও জ্ঞান হারানোর অনুভূতি হতে পারে। মাউন্ট প্লিজ্যান্টের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট উইল বুলসিভিকজ বলেন, ‘আসন্ন ইস্কেমিক কোলাইটিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে নিম্ন রক্তচাপ। রক্তচাপ কমে গেলে শরীর নিরাপদ মোডে চলে যায়, অর্থাৎ এটি হার্ট ও মস্তিষ্ককে সাপোর্ট দিতে কোলনে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলোতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। অন্যকথায় বলতে পারেন, আমাদের শরীর হার্ট ও মস্তিষ্ককে বাঁচাতে কোলনকে উৎসর্গ করে।’

পেট মোচড়ানো ও ব্যথা: ইস্কেমিক কোলাইটিসের অ্যাটাক দ্রুত ও ভয়ংকর হয়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মাউন্ট সিনাই হসপিটালের ক্লিনিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড এন্ডোসকপির পরিচালক ডেভিড গ্রিনওয়াল্ড বলেন, ‘ইস্কেমিক কোলাইটিসের অন্যতম সতর্কীকরণ লক্ষণ হচ্ছে, হঠাৎ করে পেট মোচড় দিয়ে ওঠা অথবা তীব্র ব্যথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেটের বামদিকে এ উপসর্গ দেখা দেয়।’

বমিভাব: ডা. গ্রিনওয়াল্ডের মতে, ইস্কেমিক কোলাইটিসের অন্যতম নীরব উপসর্গ হচ্ছে বমিভাব। তিনি আরো বলেন, ‘বমিভাব কিন্তু হার্ট অ্যাটাকেরও লক্ষণ হতে পারে। বমিভাবের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মলত্যাগের প্রয়োজন অনুভূত হলে এটা ইস্কেমিক কোলাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

ডায়রিয়া: ইস্কেমিক কোলাইটিস অ্যাটাকের সময় পেটে মোচড় বা তীব্র ব্যথার সঙ্গে রক্তময় ডায়রিয়া বেশ কমন। ডা. বুলসিভিকজ বলেন, ‘সুস্থ লোকের হঠাৎ করে পেটে ব্যথা শুরু হয়, তারপর ডায়রিয়া হয়। প্রায়ক্ষেত্রে ডায়রিয়াতে রক্তের উপস্থিতি থাকে।’

পানিশূন্যতায় পেটে স্ট্রোক হয়?

অনেক মানুষই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন না। কিন্তু এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, শরীরের পানিশূন্যতা ইস্কেমিক কোলাইটিসে অবদান রাখে। ডা. বুলসিভিকজ বলেন, ‘ইস্কেমিক কোলাইটিসের অধিকাংশ কেসই শারীরিক পানিশূন্যতা ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হয়। শরীরে পানিশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে, জিহ্বা ও ঠোঁটের শুষ্কতা।’

পেটের স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

ইস্কেমিক কোলাইটিসে হার্টের স্পন্দন হার বেড়ে যায় ও রক্তচাপ কমে যায়, বলেন ডা. বুলসিভিকজ। রক্তে মূত্র বর্জ্যের উপস্থিতিও ইস্কেমিক কোলাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। কিডনি দুটি পর্যাপ্ত রক্ত না পেলে কঠোর পরিশ্রম করে ও ইউরেমিয়া ঘটে। রক্তে মূত্রের বর্জ্য জমে ইউরেমিয়া ডেভেলপ হয়। ডা. বুলসিভিকজের মতে, কিছু কেসে এ বিষয়টি ইস্কেমিক কোলাইটিস শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

পেটের স্ট্রোকের ঝুঁকি যাদের বেশি

ডা. গ্রিনওয়াল্ডের মতে ষাটোর্ধ্ব বয়সি মানুষদের ইস্কেমিক কোলাইটিসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, যদিও যেকোনো বয়সে এরকম স্ট্রোক হতে পারে। অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে ভাস্কুলাইটিস বা রক্তনালীর প্রদাহ, রক্তজমাটে অস্বাভাবিকতা ও পূর্বে সম্পন্ন পেটের অস্ত্রোপচার। কিছু ওষুধের ব্যবহারেও ইস্কেমিক কোলাইটিস হতে পারে, যেমন- মুখে সেবনযোগ্য গর্ভনিরোধক ওষুধ। দৌঁড়বিদদের মধ্যে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। আলসারেটিভ কোলাইটিস ক্রনিক হলেও ইস্কেমিক কোলাইটিস সাধারণত একবার হয়ে থাকে। সাপোর্টিভ কেয়ারে অধিকাংশ লোক নিরাময় পেয়ে থাকেন (যেমন- প্রচুর তরল পান), বলেন ডা. স্বামীনাথ।

পড়ুন : *

       *

       *

       *

       *

       *

       *



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়