ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষ টয়লেট পেপার কিনছে কেন? 

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষ টয়লেট পেপার কিনছে কেন? 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত থাকতে মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকেই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার জন্য সুপার শপগুলোতে ভিড় করছেন। নিচ্ছেন নানা ধরনের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি। অনেকেই আবার টয়লেট পেপারের দিকে ঝুঁকেছেন।

মানুষ হঠাৎ টয়লেট পেপারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টয়লেট পেপার বিশেষ সুরক্ষা দেয় না। তাছাড়া এটি আসন্ন মহামারির কথা ভেবে সংগ্রহে রাখার মতো জিনিসও নয়। মহামারিতে টিকে থাকতে সাধারণত দুধ ও পাউরুটির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাবার সংগ্রহে রাখা হয়। সেখানে মানুষ টয়লেট পেপারের খোঁজ করছে কেন? এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রফেসর ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট টেইলর সিএনএনকে বলেন, ‘একদিকে করোনাভাইরাসের প্রতি এই প্রতিক্রিয়া বোধগম্য হলেও, অন্যদিকে মনে হচ্ছে এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা চাইলে আতঙ্ক ছাড়াই করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে পারি। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ভাইরাসটি সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানা।’

টেইলর জানান, মানুষ যখন পরস্পরবিরোধী কথা শোনে তখন তারা দ্বিধায় পড়ে এবং শেষপর্যন্ত ভবিষ্যতের সবচেয়ে খারাপ পরিণতির কথা ভেবে বাড়াবাড়ি রকমের প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করে। বিপজ্জনক এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি প্রধান উপায় হচ্ছে, ঘনঘন হাত ধোয়া। এক্ষেত্রে টয়লেট পেপার কাজে আসে না। তাই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কথা শুনে মাথা না খাটিয়ে অযৌক্তিক কিছু মজুদ করার মানে হয় না।

করোনাভাইরাসজনিত ভয় বৃদ্ধিতে সোশ্যাল মিডিয়া বড় ভূমিকা রাখছে মনে করে টেইলর বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত ক্রেতাদের ছবি দেখে ঘরে বসে থাকা মানুষের মনেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা ভাবেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটতে চলেছে। তাই তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং অন্যরা যে জিনিস কিনছে তা কিনতে দোকানে ভিড় জমান। যখন কেউ দেখেন, সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবেলা করতে অন্যরা কিছু কিনছেন, তখন তার মনেও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনিও অন্যদের অনুকরণ করার তাড়না অনুভব করেন।

টেম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ফ্রাঙ্ক ফার্লি বলেন, ‘সম্ভাব্য মহামারির কথা ভেবে প্রস্তুতি গ্রহণ অস্বাভাবিক কিছু নয়, এটা মানুষের প্রকৃতিপ্রদত্ত তাড়না। করোনাভাইরাসটি আমাদের বেঁচে থাকার মনস্তত্ত্বকে নাড়া দিয়েছে। এই মনস্তত্ত্ব আমাদের বলছে, আমরা অবশ্যই যতটা সম্ভব ঘরে অবস্থান করবো এবং প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ রাখবো, যেমন- টয়লেট পেপার। যেসব দেশে বাথরুমের কাজে টয়লেট পেপার ব্যাপক ব্যবহৃত হয়, সেখানে এটা প্রয়োজনীয় জিনিসই বটে। তারা হয়তো আতঙ্কে ভুগছেন যে টয়লেট পেপারের সরবরাহ নিঃশেষ হয়ে গেলে কী হবে?’

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সে দেশের জনসাধারণকে ন্যূনতম দু’সপ্তাহের খাবার, টয়লেট্রিজ ও মেডিক্যাল সাপ্লাইজ সংগ্রহে রাখতে বলেছে। কিন্তু জনসাধারণ দু’সপ্তাহ নয়, দীর্ঘসময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করছে। মানুষের সহজাত প্রবণতাই তাদের অধিক হারে মজুদে উদ্বুদ্ধ করছে।


ঢাকা/ফিরোজ/তারা/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়