ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনাভাইরাস সংক্রমণের যত জটিলতা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণের যত জটিলতা

নতুন করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগের নাম হচ্ছে কোভিড-১৯। এ রোগের উপসর্গগুলো হালকা ও মধ্যম মাত্রার হয়ে থাকে, যা ঘরে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এটা অধিকাংশ কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে সত্য। কিন্তু কেউ বয়স্ক হলে অথবা তার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো আরেকটি স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তিনি কোভিড-১৯ এর মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। 

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, প্রায় প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজনের জটিলতা দেখা দেয় এবং কারো কারো জটিলতা এতটা মারাত্মক হয় যে তারা আর বাঁচতে পারেন না। এখানে কোভিড-১৯ বা নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে শারীরিক জটিলতাগুলো উল্লেখ করা হলো।

অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেইলিউর: কোভিড-১৯ সংক্রমণে যখন কারো অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেইলিউর হয় তখন তার ফুসফুস তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন পাঠাতে পারে না অথবা যথেষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিতে পারে না। উভয় সমস্যাই একই সময়ে ঘটতে পারে। একটি গবেষণায় চীনের ৬৮ জন মৃত কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা গেল যে তাদের মধ্যে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেইলিউর।

নিউমোনিয়া: চীনের অনেক কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে প্রথম শারীরিক জটিলতা ছিল নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে ফুসফুসের বায়ুথলিতে প্রদাহ হয়ে শ্বাসক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা খুব অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীর ফুসফুসের ইমেজ গবেষণা করে দেখেছেন যে সেগুলো তরল, পুঁজ ও মৃতকোষের বর্জ্যে ভরে গেছে। এসব কেসে রোগীদের শরীর তন্ত্রগুলোকে সঠিকভাবে সচল রাখতে রক্তে অক্সিজেন পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছিল।

অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম: চীনে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথমদিকে সবচেয়ে প্রচলিত শারীরিক জটিলতা ছিল অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (এআরডিএস)। এআরডিএসে ফুসফুস এত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে সেগুলো থেকে তরল লিক করতে থাকে। এর ফলে শরীরের পক্ষে রক্তপ্রবাহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফুসফুস নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত শ্বাসক্রিয়া চালাতে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যাকিউট লিভার ইনজুরি: গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিকাংশ গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর লিভার ড্যামেজের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে, ভাইরাসটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নাকি অন্য কারণে লিভারের ক্ষতি হয়। অ্যাকিউট লিভার ইনজুরি ও লিভার ফেইলিউরে জীবননাশ হতে পারে (অ্যাকিউটের অর্থ হলো হঠাৎ করে ঘটা)।

অ্যাকিউট কার্ডিয়াক ইনজুরি: গবেষণায় পাওয়া গেছে, চীনে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিকৃত কিছু রোগীর হার্টের সমস্যা ডেভেলপ হয়েছিল, যেমন- অ্যারিদমিয়া বা হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা। ওয়াশিংটন স্টেটের গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যেও উচ্চ মাত্রার কার্ডিয়াক ইনজুরি ছিল। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয় যে, ভাইরাসটি নিজেই হার্টকে আক্রান্ত করে নাকি রোগটির কারণে শরীরে যে সার্বিক চাপ পড়ে তা থেকে হার্টের সমস্যা ডেভেলপ হয়। কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে যে কার্ডিয়াক সমস্যা তৈরি হয় তা রোগটি থেকে নিরাময় পাওয়ার পরও থেকে যেতে পারে। রোগটি নতুন বলে এখনো এ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

সেকেন্ডারি ইনফেকশন: সেকেন্ডারি ইনফেকশনের মানে হলো, একজন রোগীর এমন কোনো সংক্রমণ হতে পারে যার সঙ্গে প্রথম সমস্যার সম্পর্ক নেই। নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগীদের অন্যকোনো সংক্রমণও হতে পারে। কিছু গবেষণার একটি রিভিউ থেকে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তিকৃত কোভিড-১৯ রোগীরা সেকেন্ডারি ইনফেকশন জনিত জটিলতার ঝুঁকিতে থাকেন, যদিও এর সম্ভাবনা কম। নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। দুটি কমন কালপ্রিট হচ্ছে স্ট্রেপ ও স্ট্যাফ। এই জটিলতা এত বেশি মারাত্মক হতে পারে যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি: এখনো পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে এই জটিলতার হার কম। কিন্তু এটি ঘটলে তা মারাত্মক হয়ে থাকে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে চিকিৎসকেরা ড্যামেজ এড়াতে চিকিৎসা শুরু করেন। কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রোগীদেরকে ডায়ালাইসিস করা হতে পারে, যেখানে একটি মেশিন দিয়ে রক্তকে পরিস্রাবণ করা হয়। কখনো কখনো সাধিত ড্যামেজ নিরাময় হয় না এবং রোগীদের ক্রনিক কিডনি রোগ ডেভেলপ হয়, যার চিকিৎসা দীর্ঘসময় ধরে করতে হয়।

সেপটিক শক: সেপসিস তখন ঘটে যখন সংক্রমণের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া ভুলদিকে পরিচালিত হয়। অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রক্তপ্রবাহে যেসব কেমিক্যাল নিঃসরিত হয় তা সঠিক প্রতিক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করার পরিবর্তে অর্গানকে ড্যামেজ করে। এই প্রক্রিয়া না থামালে সেপটিক শক হয়। রক্তচাপ খুব কমে গেলে সেপটিক শক প্রাণনাশক হতে পারে। চীনে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কিছু রোগীর সেপটিক শক হয়েছিল।

ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগিউলেশন: ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগিউলেশনের (ডিআইসি) ক্ষেত্রে শরীরের ব্লাড-ক্লটিং রেসপন্স সঠিকভাবে কাজ করে না। অস্বাভাবিক রক্তজমাট থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ অথবা অর্গান ফেইলিউর হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া অনেক রোগীর মধ্যে ডিআইসি ছিল।

রেবডোমাইলোসিস: রেবডোমাইলোসিস হচ্ছে খুব বিরল স্বাস্থ্য দুর্দশা। কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে এ সমস্যাটিও দেখা যাচ্ছে। রেবডোমাইলোসিসে পেশির ক্ষয় হয় ও টিস্যু মারা যায়। কোষগুলো খসে পড়ে রক্তপ্রবাহে মায়োগ্লোবিন নামক প্রোটিন মিশে যায়। কিডনিগুলো এসব প্রোটিনকে রক্ত থেকে যথেষ্ট দ্রুত বের করে দিতে না পারলে মৃত্যু হতে পারে।

তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়