ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া: যা জানা জরুরি

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া: যা জানা জরুরি

নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত অধিকাংশ লোকেরই মৃদু উপসর্গ (যেমন- কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট) দেখা গেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কিছু লোকের উভয় ফুসফুসেই মারাত্মক নিউমোনিয়া ডেভেলপ হতেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ জনিত নিউমোনিয়া হচ্ছে মারাত্মক অসুস্থতা যা জীবনের প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। এখানে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জনিত নিউমোনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

নিউমোনিয়া কী?

নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের সংক্রমণ যেখানে ফুসফুসের ভেতরস্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলিতে প্রদাহ হয়। একসময় সেগুলো তরল ও পুঁজে ভরে যেতে পারে, যার ফলে শ্বাসকার্য কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীদের তীব্র শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর, শীত শীত অনুভূতি, ক্লান্তি ও বুক ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসকেরা কাশির ওষুধ ও জ্বর উপশমকারী ব্যথানাশক দিতে পারেন। বেশিরভাগ তীব্র কেসে রোগীকে হাসপাতালে নেয়া ও শ্বাসক্রিয়া চালাতে ভেন্টিলেটরের দরকার পড়ে।

কোভিড-১৯, ফ্লু ও ঠান্ডার মতো ভাইরাস জনিত সংক্রমণে নিউমোনিয়া ডেভেলপ করতে পারে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য অণুজীবে সৃষ্ট রোগেও ফুসফুসে প্রদাহ হতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে নিউমোনিয়ার হার কেমন?

দেখা গেছে যে, কোভিড-১৯ এর প্রায় ১৫ শতাংশ কেসই তীব্র প্রকৃতির। এর মানে হলো, রোগীদেরকে হাসপাতালে এনে অক্সিজেন থেরাপি দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ও তাদেরকে ভেন্টিলেটর দিয়ে চিকিৎসা করতে হচ্ছে।

যাদের নিউমোনিয়া হবে তারা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (এআরডিএস) নামক স্বাস্থ্য দুর্দশায়ও ভুগতে পারেন। এআরডিএস হচ্ছে, এমন একটা রোগ যা হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়ে শ্বাসক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

নতুন করোনাভাইরাসটি ফুসফুসকে তীব্রভাবে প্রদাহিত করে। এটি ফুসফুসস্থ বায়ুথলির কোষ ও কলাকে ড্যামেজ করে। ড্যামেজের কারণে কলা ছিঁড়ে যায় ও ফুসফুসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় ।বায়ুথলির প্রাচীরে পুরুত্ব বেড়ে গিয়ে শ্বাসকর্ম কঠিন হয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে কাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি?

যেকোনো কোভিড-১৯ রোগীর নিউমোনিয়া ডেভেলপ হতে পারে, কিন্তু এটি বেশি হয়ে থাকে ৬৫ ও তদোর্ধ্ব বয়সি মানুষদের। ৮৫ ও তদোর্ধ্ব বয়সি রোগীরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া যেসব কোভিড-১৯ রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন না অথবা যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদেরও নিউমোনিয়ার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। এসব রোগীরা নিউমোনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন: মধ্যম থেকে তীব্র হাঁপানি, ফুসফুস রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, লিভার রোগ, কিউনি ফেইলিউর, খুব স্থূলতা অথবা ৪০ ও তদোর্ধ্ব বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)।

এছাড়া যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তথা রোগপ্রতিরোধ শক্তি কম তারাও নিউমোনিয়ার মতো কোভিড-১৯ এর তীব্র জটিলতায় ধুঁকতে পারেন। ধূমপায়ী, ক্যানসার চিকিৎসার রোগী, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের রোগী, অনিয়ন্ত্রিত এইচআইভি বা এইডস রোগী ও ইমিউন সিস্টেম ধীরকারী ওষুধ (যেমন- স্টেরয়েড) ব্যবহারকারীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জনিত নিউমোনিয়া কিভাবে শনাক্ত হয়?

রোগীর উপসর্গ ও ল্যাব টেস্টের ফলাফল দেখে চিকিৎসকেরা কোভিড-১৯ জনিত নিউমোনিয়া শনাক্ত করতে পারেন। জ্বর, শুষ্ক কাশি ও ক্লান্তি হচ্ছে কোভিড-১৯ এর প্রারম্ভিক উপসর্গ। এ সময় বমিভাব, ডায়রিয়া, শরীর ব্যথা ও বমিও হতে পারে।

কিছু লক্ষণ দেখে ধারণা করতে পারেন যে কোভিড-১৯ থেকে নিউমোনিয়া হয়েছে, যেমন- দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাসক্রিয়া, মাথাঘোরা ও খুব ঘাম নিঃসরণ।

রক্ত পরীক্ষায়ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জনিত নিউমোনিয়ার লক্ষণ ধরা পড়তে পারে, যেমন- নিম্নমাত্রার লিম্ফোসাইট ও বর্ধিত মাত্রার সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি)। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যেতে পারে। বুকের সিটি স্ক্যানে ফুসফুসের ড্যামেজ দেখা যেতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট নিউমোনিয়ার চিকিৎসা রয়েছে?

নিউমোনিয়া রোগীকে হাসপাতালে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। শ্বাসকার্যে সাহায্য করতে ভেন্টিলেটর ও পানিশূন্যতা এড়াতে শিরাপথে তরল সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু পরীক্ষামূলক ওষুধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ কোভিড-১৯ সম্পর্কিত নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর কিনা তা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা হচ্ছে, যেমন- ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ডেভেলপ করা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভির। ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং কিছুক্ষেত্রে এর সঙ্গে অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যা করবেন

যাদের নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তথা কোভিড-১৯ জনিত জটিলতার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে তাদেরকে ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে করণীয় হচ্ছে:

* প্রায়সময় সাবান ও পানি ব্যবহারে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে।

* হাত ধোয়ার উপকরণ না পেলে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার না শুকানো পর্যন্ত পুরো হাতে ঘষতে থাকুন।

* হাত না ধুয়ে গাল, মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ করবেন না।

* অসুস্থ মানুষের কাছে যাবেন না। ঘরে থাকুন ও যথাসম্ভব সকলের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

* ঘরের জিনিসের সারফেস নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন, বিশেষ করে ঘনঘন হাতের সংস্পর্শে আসে এমন জিনিস, যেমন- কিবোর্ড, টেবিল, দরজার হাতল, ফোন ও টিভির রিমোট।

তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়