ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঈদ-পূজা ও চিকিৎসা : সম্প্রীতির বাংলাদেশ || সেলিনা হোসেন

সেলিনা হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০১, ৯ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদ-পূজা ও চিকিৎসা : সম্প্রীতির বাংলাদেশ || সেলিনা হোসেন

সেলিনা হোসেন : এ বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তী সময়ে রোজার ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজের আগে জঙ্গি হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষ। এ বাংলাদেশ এ দেশের মানুষের চিরচেনা বাংলাদেশ নয়।

 

গত কয়েক বছরে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে খুন করেছে। বাংলাদেশ ধর্মীয় বৈচিত্র্যের দেশ। পঁয়তাল্লিশটির বেশি আদিবাসি জনগোষ্ঠী এদেশে বাস করেন। কালচারাল ডাইভার্সিটি এদেশের সবচেয়ে বড় দিক। আজকের বাংলাদেশে এই কালচারাল ডাইভার্সিটিকে হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করছে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী।

 

৭ জুলাই ছিল ঈদুল ফিতরের দিন। এই দিন শোলাকিয়া ঈদ জামাতে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা ঝরণা রাণী ভৌমিক। ভোরে উঠে রান্না করছিলেন তিনি। জানালার খোলা পথে আসা গুলি তার মাথায় বিদ্ধ করে। তার মৃত্যু হয়।

 

ঈদের দিনে জঙ্গির গুলিতে হিন্দু নারীর মৃত্যু দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধন রচিত হলো এই বাংলাদেশে। এই বাংলাদেশই আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানবিক বোধের স্বপ্নের ভূমি। এই ভূমিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচ্ছন্ন রাখার দায় দেশের মানুষের।

 

দৈনিক ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ পত্রিকায় ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে মুদ্রিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘হবিগঞ্জে ঈদের জামাত পাহারায় ছিলেন ৬০ হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক।’ রিপোর্ট করেছেন হবিগঞ্জের সাংবাদিক মামুন চৌধুরী। রিপোর্টটি এমন : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন হবিগঞ্জের ৬০ জন হিন্দু ধর্মালম্বী স্বেচ্ছাসেবক। গত মঙ্গলবার কোরবানির ঈদের দিন সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা জেলার কেন্দ্রীয় ঈদগাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ঈদের জামাতে কেউ যাতে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটতে পারে এবং মুসলমানরা যেন নির্ভয়ে নামাজ পড়তে পারেন এ জন্যই তাদের এই দায়িত্ব পালন।

 

আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন ওই ৬০ জনের স্বেচ্ছাসেবক দলে। তারা ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ঈদগাহের সামনে শায়েস্তানগর পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় কথা হয় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনরত পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তুষার মোদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপনের জন্যও কোনদিন সকালে ঘুম থেকে উঠিনি। কিন্তু আজ সকাল সাড়ে ৬টায় হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতে সবার সঙ্গে মিলিত হয়েছি। কাজটা করে অসম্ভব একটা প্রশান্তি পেয়েছি। আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা যেন কোনো আতঙ্ক আর ভয় ছাড়া তাদের নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

 

পূজা উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি অটুট থাকার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা তাদের নামাজ আদায় করতে পেরেছেন, এজন্য খুব ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমরা একই শহরে বাস করি। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হিন্দু মুসলিম সবার সঙ্গে কাজ করতে হয়। শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে তো আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াতে পারব না। আজকে যা করেছি সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। হবিগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পেরেছি এই জন্য ভালো লাগছে।’

 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উদ্যোগটি নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জহির। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ স্বেচ্ছাসেবকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’

 

সবাই মিলে বসবাসের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনভাবে জায়গাগুলো ধরে রাখলে বেঁচে থাকা অর্থবহ হবে। আমাদের সন্তানের দেশপ্রেমের আলোয় বড় হবে। জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে নিজের বলয়ে রাখবে। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের মানুষ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।

 

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনার বামনা উপজেলার চৌগতলা ইউনিয়নের হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান এবার সেই এলাকায় কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি নিজে ঢাকায় থাকেন। এলাকায় ভেড়া কেনার টাকা দিয়ে আসেন। ওদেরকে বলেন ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী মাংস হবে। তারপর তা হিন্দু-মুসলিম প্রতিবেশি ও দারিদ্রের মাঝে বিতরণ করা হবে। ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীন করার জন্য আমি গরুর বদলে ভেড়া কিনি। তিনি আরো বলেন, আমার জীবনে শৈশব থেকে দেখে আসা সংস্কৃতি ছিল সম্মিলিত। ঈদ-পূজা-বাংলা নববর্ষ, পূণ্যাহ, চৈত্র সংক্রান্তি, নবান্ন ইত্যাদি উৎসব দেখে বড় হয়েছি। সে সময়ে প্রার্থনা ছিল যার যার। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তারা সেখানে যাবেন। উৎসবের বাকি সময় হবে সবার জন্য মিলনমেলা।

 

আগে দেখেছি সাতজনে মিলে একটি গরু কোরবানি করত। এখন একদল মানুষ গরু বেচার প্রতিযোগিতায় নামে। লোক দেখানো প্রতিযোগিতা। ধর্মের মূল সত্য এখানে উপেক্ষিত হয়। ধর্মে আছে তার সবচেয়ে প্রিয় প্রাণীটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে হবে। তারপর তা সবার মাঝে বিতরণ করতে হবে। জঙ্গিবাদের উত্থানের মতো অবস্থা দেখে আমি সমন্বিত সংস্কৃতির চিন্তা থেকে ভেড়া কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেই। সংস্কৃতির নাড়ির টান যেন আমরা ধরে রাখতে পারি এবং আমাদের সন্তানদের এই বলয়ে ঢোকাতে পারি এই চিন্তাই আমাকে পথে এগোতে বলছে। আমি তাই করব। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদেরকে এভাবে এগোতে হবে। পূজার সময়ও আমরা এভাবে মিলিত হবো। এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

 

হবিগঞ্জ, বরগুনা হয়ে এবার আমি যাচ্ছি কুড়িগ্রামে। কোনো উৎসবের কথা বলব না। বলব চিকিৎসা-উৎসবের কথা। উৎসব মানুষের মননের আলো। চিকিৎসা মানুষের শারীরিক প্রয়োজন। কুড়িগ্রামের এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থার উল্লেখ করছি যা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আর একটি বাজার।

২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আবদুল খালেক ফারুক ‘নেচে-গেয়ে চিকিৎসা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট দৈনিক ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। রিপোর্টটি এমন- চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি হলেও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে স্টোকের পর প্যারালিসিস তথা শরীরের একাংশ অবশ বা অকার্যকর হয়ে যাওয়া রোগের চিকিৎসা (!) এখনো বেশ জনপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে সারিয়ে তোলার নামে বিষহরা গান বা মনসার জারি ও নৃত্যগীত গাওয়া হয়। শনিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভেলগাছা ইউনিয়নের নীলকণ্ঠ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ আলী বাড়ির আঙিনায় পাতা একটি চৌকিতে বসা। চৌকির চারপাশে নৃত্যসহ গান গাইতে গাইতে বৃত্তাকারে ঘুরছে একটি দল। একজন গামছা দিয়ে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝাড়ছে। কবিরাজ, তার তিন সাগরেদ, সঙ্গে নেওয়া হয়েছে গ্রামের কয়েকজন কিশোরীকে। তারা গাইছে মনসার জারি। কিংবা বিষহরা গান। রোগীর হাত-পা অবশ। কোনো শক্তি নেই। কবিরাজের মতে, ‘বাসলি হয়েছে মনসার অভিশাপে। সাপের নিঃশ্বাস থেকে ওই অসুখ হয়েছে। তাই মনসার জারি কিংবা বিষহরা গান দিয়েই ফাঁড়া কাটাতে হবে। গান চলছে, ‘রসের ফুল ফুটিল গো ফুলের বাগানে...।’ চৌকির পাশেই কলাপাতা দিয়ে সাজানো একটি পূজার ঘর। তাতে নানা ধরনের পূজার সামগ্রী।

 

রোগীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, তিনি ও তার মেয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তার স্বামী চার বছর আগে স্ট্রোক করার পর ঢাকায় চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ হলেও ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। এমনকি কথাও বলতে পারেন না। আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে মাস্টারের হাটের ফজলু কবিরাজের সঙ্গে কথা হয়। রোগীকে পুরো সুস্থ করার শর্তে ২৭ হাজার টাকা চুক্তি হয় মৌখিকভাবে। ১৪ দিনে ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ঝাড়ফুঁক বিষহরা গানের সঙ্গে মালিশ এমনকি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগীর কোনো উন্নতি হচ্ছে না। পরে কবিরাজ তার ওস্তাদ দাসেরহাটের আব্দার আলীকে এনেছেন। কবিরাজদের বাহানা দিন দিন বাড়ছেই।

 

রাবেয়া বলেন, ‘কবিরাজদের ভাবভঙ্গি বুঝি না। এরা যেভাবে আমাদের চালাইতাছে সেইভাবে চলতাছি। হেরা যদি কবিরাজি করে, তাইলে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দেয় কেন?’ তিনি জানান, কবিরাজ তাকে জানিয়েছেন, ১৪ দিন ওই চিকিৎসার পর কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে রোগটিকে বিদায় দেওয়া হবে।

 

কয়েকদিন আগে সদর উপজেলার বাংটুরঘাট এলাকায় এ রকম একটি ভেলা বাসাতে দেখা যায়। রঙিন কাগজ দিয়ে সুন্দর করে সাজানো ভেলাটি ভাসানোর আগে করা হলো মন্ত্রপাঠ ও পূজা অর্চনা। কবিরাজের শিষ্য মিজানুর বলেন, ভেলাটি নদীতে ভাসতে থাকবে আর যত বিষ বেদনা সব নিয়ে যাবে। ভেলাটি ভাটির দিকে না গেলে বুঝতে হবে রোগী তিন দিনের বেশি বাঁচবে না। তার ওস্তাদ কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের আমিনবাজারের নুরুল কবিরাজ দাবি করেন, এভাবে তারা অনেক রোগীকে সুস্থ করেছেন। একই দাবি করেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর মকবুল কবিরাজ, রাজাহারহাটের ঝগড়ির বাজারের বকুল কবিরাজসহ কয়েকজন সদর উপজেলার তালুককালোয়া গ্রামে প্যারালাইসিস রোগীকে ঘিরে একটি মজমা দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, একইভাবে মধ্যবয়সি সরস্বতী নামের এক গৃহবধূকে চৌকির ওপর বসিয়ে ঢাকঢোল নিয়ে বিষহরা গানের আসর বসানো হয়েছে। গ্রামের নানা বয়সী মানুষ ভিড় করছে সেখানে। নাগেশ্বরী উপজেলার ইসমাইল কবিরাজ তার পাঁচ সাগরেদকে নিয়ে ঝাড়ফুঁকের সঙ্গে মালিশও করছেন। চুক্তি হয়েছে সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকা। রোগীর স্বামী রতন রায় জানান, একটি সাইকেল বিক্রি ও লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে মেটানো হচ্ছে কবিরাজের খরচাপাতি। রোগী আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ বলে মনে হয় তার কাছে। ইসমাইল কবিরাজের দাবি, ৩০ বছরে তিনি এভাবে হাজার রোগীকে সারিয়ে তুলেছেন।

 

গান চলছে, ‘পদ্মা দিয়াছে আমায় মরণও ফাঁসি/ঢেউ দিয়ো না কালা প্রাণ শশী/কী করিবে দেবের পদ্মা/কোন বা কাজও করে/গা-টা জলে নামিয়া পদ্মা গা-টা মাঞ্জন করে/কালা মায়সেন দিয়াছে আমায় মরণও ফাঁসি...।’

 

কবিরাজদের দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসকরা যখন চিকিৎসা করে রোগ সারাতে ব্যর্থ হন, তখন তাদের ডাক পড়ে। রোগী অল্প বয়সী হলে সুস্থ হওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দেন। আর বৃদ্ধ হলে নিদেনপক্ষে হাঁটাচলা করতে পারার আশ্বাস দেন তারা। চিকিৎসা করা হয় চুক্তিতে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে গত কয়েক বছরে প্যারালাইসিস রোগের প্রকোপ বেড়েছে। দেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা সীমিত হওয়ায় অবস্থাসম্পন্নরা প্রাইভেট ক্লিনিকের দিকে ঝুঁকলেও দরিদ্র মানুষ শরণাপন্ন হচ্ছে কবিরাজদের। সেই সুযোগে ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্র আর বিষহরা গানের সাহায্যে করা হচ্ছে অভিনব চিকিৎসা।

 

তবে চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসায় তন্ত্রমন্ত্রের কোনো উপযোগিতা নেই। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আবেদীন জানান, মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির প্রতারক ঝাড়ফুঁকের নামে প্রতারণা করছে। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ জনসচেতনতা তৈরির কাজ করছে।”

 

এই রিপোর্টের সঙ্গে চারটি রঙিন ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকার পৃষ্ঠায়। প্রথম ছবিতে আছে ‘মনসা দেবীর নামে ভেলা ঘিরে নাচ-গান। দ্বিতীয় ছবির ক্যাপশন ‘রোগিকে ঘিরে বিষরো গানের সঙ্গে চলছে নাচ।’ তৃতীয় ছবিতে আছে ‘নাচ-গানের পর ভেলা ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ চতুর্থ ছবিতে আছে ‘তন্ত্রমন্ত্রের সাহায্যে চলছে পক্ষাঘাতগ্রস্তের সুস্থ হওয়ার ইচ্ছা বিনোদনের ঊর্ধ্বে একটি বড় শারীরিক পরিচর্যা। মানুষ এভাবে পরিচয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করতে পারে। এই দৃঢ়তায় আমাদের সামনে থেকে দূর হবে জঙ্গিদের অন্যায় কার্যক্রম। চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা বলবেন ওরা যা করছে এটা চিকিৎসা শাস্ত্র নয়। বেশিরভাগ মানুষও তাই বলবেন। কিন্তু চিকিৎসার লক্ষ্যে মানুষের জড়ো হওয়া এবং মানসিক স্বস্তির জায়গা খুঁজে পাওয়াকে অস্বীকার করার উপায় আছে কি? নেই। মানুষকে বেঁচে থাকার জায়গা খুঁজে নিতে হয়।

 

এমন উচ্চারণই করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ তাদের শারদ শুভেচ্ছা কার্ডে। লিখেছেন: “অসুভ শক্তি আজও বিরাজমান সর্বত্র। কালের বিবর্তনে আজ এর রূপ হয়েছে ভিন্ন হতে ভিন্নতর। আমাদের একত্রিত হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সংঘ এবং এই সংঘ শক্তিই বিনাস করবে আজকের অসুরকে। এ বিশ্বাসেই অকাল বোধনে দলভুজা মা দুর্গার কাছে আমাদের প্রার্থনা সকল কুচক্রি এবং অসুভ শক্তি বিনাশ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে যেন আমরা ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ এই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।”

 

আবার এসেছে শারদীয় উৎসব পূজা। দেখা যাচ্ছে প্রতি বছরই ঈদের পরে পূজার উৎসব হয়। মিলন উৎসব বহমান থাকে। পত্রিকায় দেখেছি এবার ঈদের ছুটিতে বিপুল দর্শক ঘুরে দেখছে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার। বৌদ্ধ ধর্ম আমাদের মিলন উৎসবের আর একটি পরিসর। সামনে আছে ক্রিসমাস-বড়দিনের উৎসব।

 

এই মুহূর্তে পূজা উৎসবের মাঝে দাঁড়িয়ে সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনা করি মানবিক শক্তি আমাদের সহায়ক হোক।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৬/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়