ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হিলিয়াম গ্যাসের জীবন

কাশফিয়া আলম ঝিলিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হিলিয়াম গ্যাসের জীবন

মোহাম্মদ বাবুল, ছবি- আবু রায়হান ইফাত

কাশফিয়া আলম ঝিলিক : কোনোটি দেখতে মাছের মতো, হাঁসের মতো, উড়োজাহাজের মতো, আবার কোনোটি টম জেরি কিংবা মটু-পাতলু কার্টুনের আদলে বানানো। এমন নানান রঙের, আকৃতির হিলিয়াম গ্যাসে ভরা বেলুন হয়তো দেখেছেন। ছোটরা যেমন হিলিয়াম গ্যাসের বেলুন নিয়ে মজা করে, বড়রাও আনন্দঘন মুহূর্তে বেলুন আকাশে উড়িয়ে উদযাপন করেন।

হিলিয়াম গ্যাসভর্তি বেলুন বিক্রি করে চলে কিছু মানুষের জীবিকা। তেমনি একজন মোহাম্মদ বাবুল (৪৮)। আগে পথে ঘুরে বেলুন বিক্রি করলেও এখন চুপসে থাকা বেলুনগুলোতে হিলিয়াম গ্যাস ভরেন তিনি। গ্যাস ভরার সঙ্গে সঙ্গে বেলুনগুলো নানারকম আকার পায়। যেন সেগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। বেলুনে গ্যাস ভরেই চলে বাবুলের জীবিকা।

গ্যাস বেলুন বিক্রেতা বাবুলের বাড়ি দ্বীপ জেলা ভোলায়। তিনি থাকেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। গত ১৫ বছর থেকে এই একই গ্যাস বেলুনের ব্যবসা করছেন তিনি। প্রথমে দুই টাকার বেলুন বিক্রি থেকে শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেলুন দিয়ে ডেকোরেশনের জন্য তার কাছে গ্রাহক আসতে থাকে। কলাবাগান থেকে বেলুন কিনে এনে কাজ করতেন তিনি। এভাবেই চলছিল দিনকাল। হঠাৎ একদিন রাতে ২০ পিস বেলুনের অর্ডার আসে। কিন্তু নিজস্ব গ্যাস সিলিন্ডার না থাকায় তিনি ডেলিভারি দিতে পারেননি। ফলে গ্রাহকের কাছ থেকে তিরস্কার শুনতে হয় তাকে। এরপর তিনি নিজেই কিনে ফেলেন একটি সিলিন্ডার।

বাবুল রাইজিংবিডিকে জানান, প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার মেডিসিন দিতে হয় এই সিলিন্ডারে। এক সিলিন্ডার গ্যাসে আনুমানিক ৮০টি বেলুনে গ্যাস ভরা যায়। চকবাজার থেকে প্রতিটি বেলুন কিনে আনেন ২২ টাকায়। এতে গ্যাস ভরে ক্রেতার হাতে তুলে দেন ৩০ টাকার বিনিময়ে। এতো কষ্ট করেও সারা বছর তেমন একটা বিক্রি হয় না। তবে শীতে মূলত বিক্রি হয় বেশি।



শুধু জাবি ক্যাম্পাসেই নয়, আশেপাশে আরো ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানেও কিছু নিদির্ষ্ট হকারের কাছে তিনি এই বেলুন বিক্রি করেন। সকাল ৭টায় বের হলে ১০-১১টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বিক্রি। গ্যাসে বেলুন ভরে পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডেকোরেশনের কাজও করেন তিনি। বেলুন বিক্রি ও ডেকোরেশনের কাজ করে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা আয় হয়। তবে মাঝেমধ্যে সিলিন্ডারের কারণে পুলিশ ঝামেলা করে। তখন মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয় তাকে। বাবুল জানান, পরিবারে তার ২ মেয়ে ও ৩ ছেলে। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের জন্য হিলিয়াম গ্যাসে ভরা বেলুন নিয়ে যান বাসায়। বাচ্চারা বেলুন নিয়ে খেলে। এতে বাচ্চাদের মতো তিনিও বেশ মজা পান।ভবিষ্যত ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ম্লান হেসে তিনি রাইজংবিডিকে বলেন, ‘জীবন আর কত দিনের! ৪৮ বছর তো হইয়্যাই গেলো, বাকি জীবন্ এই পেশাতেই থাকতে চাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়