ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে রমনা বটমূলের বিস্ফোরক মামলা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে রমনা বটমূলের বিস্ফোরক মামলা

ফাইল ফটো

মামুন খান : বছর ঘুরে এলো পহেলা বৈশাখ। উৎসবে মেতেছে দেশ। কিন্তু ১৭ বছর আগে এই দিনে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দশ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হলেও সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে বিস্ফোরক আইনের অপর মামলাটি। দফায় দফায় সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও সাক্ষী হাজির করতে পারছে না পুলিশ। এতে ঝুলে আছে মামলাটির বিচারকাজ।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ২টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। হত্যা মামলায় ২০১৪ সালে রায় হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারাধীন। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহেদ নুরুদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচারে কোন অগ্রগতি নেই।

২০০৯ সালে মামলাটিতে ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য হলেও মাঝে প্রায় ৪ বছর মামলাটির বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলার রায়ের পর ২০১৪ সালে মামলাটির বিচার পুনরায় শুরু হলে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

বিচারাধীন বিস্ফোরক আইনের মামলা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘সাক্ষীদের অবহেলায় মূলত এ মামলার বিচার কাজ এগোচ্ছে না। সাক্ষীদের প্রতি আদালত থেকে সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হচ্ছে। তবুও তাদের আদালতে হাজির করতে পারছে না পুলিশ।’

এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘চার্জশিট হওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এক-এ এবং হত্যা মামলাটি তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২টি মামলা যেহেতু একই ঘটনার তাই তাদের ট্রাইব্যুনাল ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা ২টি একই সঙ্গে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠান। কিন্তু রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে ৪ বছর কোন নির্দেশনা না আসায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। তবে হত্যা মামলায় রায় হয়ে যাওয়ায় তারা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার শুরু করেছেন। কিন্তু সাক্ষী না আসায় বিচারে ধীরগতি হচ্ছে। সাক্ষী হাজির করতে আদালত থেকে সমন এবং ওয়ারেন্ট পাঠানো হচ্ছে। সাক্ষীদের জানানো হচ্ছে কিন্তু সাক্ষীরা আসছে না। সাক্ষী হাজিরের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা কারও জন্যই কাম্য নয়। সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশ তা না করে দায়িত্বে অবহেলা করছে।’

২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের স্থলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর পরপরই আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিরীহ সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদ- ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত।

মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন মুফতি আব্দুল হ্ন্নাান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো: তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই। 

যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্তরা হলেন শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আ: রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

এদের মধ্যে প্রাক্তন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক। আর শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নানের অপর এক মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য বিস্ফোরক মামলা হতে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ ১ বৈশাখ ছায়ানটের বর্ষবরন অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় ১০ ব্যক্তি নিহত হন।

নিহতরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালির সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালি জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৮/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়