ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৩ ব্যবসায় বাধ্যতামূলক ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৩ ব্যবসায় বাধ্যতামূলক ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস

এম এ রহমান মাসুম : ভ‌্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও পরিমাণ বৃদ্ধিতে ১৩ ধরণের ব‌্যবসায় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বাধ‌্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে যেসব ব্যবসা কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন রয়েছে তাদেরকে নতুন ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে হবে।

তবে যে সকল ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়‌্যার ব্যবহার করবে, সেক্ষেত্রে ইএফডি’র পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার (ইএফপি) বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।

এনবিআর সদস‌্য মো. রেজাউল হাসান (মূসকনীতি) সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ‌্য জানা গেছে। গত ২৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে তা নিশ্চিত করেছে।

আর ওই আদেশ চলতি বছরের ১ নভেম্বর হতে দেশের সকল সিটি করপোরেশন এলাকা এবং ১ ডিসেম্বর হতে দেশের সকল জেলা শহর এলাকায় কার্যকর ধরা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের ৩১ ধারা এবং মূসক বিধিমালার ২২ বিধির উপ-বিধি (৩) ও ৩৮ বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এনবিআর ওই আদেশ জারি করেছে। আদেশে দেশের সকল সিটি করপোরেশন, জেলা শহর কিংবা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এক্সাইস ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক নির্বাচিত সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত হিসাব সংরক্ষণ, বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এনবিআরের নিকট প্রেরণ ও বিক্রিত পণ্য এবং সেবার গ্রাহককে মূসক-১১ চালানপত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার (ইএফপি) ও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়‌্যার বাধ‌্যতামূলক করা হলো।

খাতগুলো হলো- আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র কিংবা বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালী সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টার-এর অন্তর্ভুক্ত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ, অন্যান্য বড় ও মাঝারী ব্যবসায়ী (পাইকারী ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার বা স্বর্ণ ও রৌপ্যের দোকান।

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য রেজাউল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিধিমালা জারির পর আগের মতোই আমদানিকারকদের বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ ইএফডি মেশিন আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। এরপর ভ্যাট কমিশনারদের স্ব স্ব কমিশনারেটের অধীনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন বা প্রতিস্থাপনে নির্দেশ দেওয়া হবে। এর ফলে ভ‌্যাট আহরণ আরো গতিশীল হবে বলে আশা করি।’

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগে ১১ ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক থাকলেও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে তা পুরোপুরি সফল হয়নি। অনেক সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসিআর মেশিন টেম্পারিং করে ভ্যাট ফাঁকি দিতো। কিন্তু ইএফডি মেশিন স্থাপন হলে মেশিন টেম্পারিং করা যাবে না। তাছাড়া প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বিক্রয়ের তথ্য সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে চলে আসবে এ সিস্টেমে।

ইএফডি সিস্টেম পরিচালনার শর্তাগুলো হলো: ইএফডির প্রত্যেক বিক্রয় তথ্য অনুমোদিত কোডের জন্য কেন্দ্রিয় ইএফডি ম‌্যানেজমেন্ট সিস্টেমে যাবে, অনুমোদিত কোড পাওয়ার পর প্রত্যেক বিক্রয় লেনদেন কার্যকর হবে, চালান ইস্যু করার আগে অনুমোদিত কোড একটি ইউনিক নম্বরসহ বিক্রয় মুদ্রিত থাকতে হবে, ডাটা সুরক্ষার সকল বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিতে হবে, দূরবর্তীভাবে এবং ব্যবসা অঙ্গনে নিরীক্ষা পরিচালনার বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে এবং বিভিন্ন ধরণের পর্যায়বৃত্ত প্রতিবেদন যেমন: এক্সরে রিপোর্ট, জেড-রিপোর্ট ইত‌্যাদি সিস্টেমের মাধ্যমে নির্ধারিত সময় পর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরের ইএফডি ম‌্যানেজমেন্ট সিস্টেমে প্রেরণের সক্ষমতা থাকতে হবে।

ইএফডি’র বৈশিষ্ট‌গুলো হলো: ডিভাইসে ন্যূনতম ৫টি ভিন্ন হারে স্বয়ংক্রিয় ভ্যাট গণনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালানোর জন্য ওয়াই-ফাই সংযোগ বা ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত সিম সংযুক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইএফডি মেশিন থেকে পণ্য ও সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের যে চালান দেওয়া হবে তাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা; বিআইএন নম্বর; তারিখ ও সময়; ক্যাশিয়ারের নম্বর ও কাউন্টার নম্বর; ফিসক্যাল ডিভাইস ও মেমোরি নম্বর; পণ্যের পরিমাণ, মূল্য, ভ্যাটের হার ও পরিমাণ, ভ্যাটসহ পণ্যমূল্য থাকবে। পাশাপাশি গ্রাহকের পেমেন্ট পদ্ধতি (নগদ, কার্ড, চেক অথবা ক্রেডিট) উল্লেখ থাকতে হবে। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান পয়েন্ট অব সেলস মেশিন ব্যবহার করছে তাদের ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার মেশিন (ইএফপি) ব্যবহার করতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, ইএফডি মেশিন সরাসরি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এনবিআর কর্মকর্তারা অফিসে বসেই মেশিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। চাইলে মেশিন কার্যকর ও অকার্যকর করতে পারবেন। প্রতিটি ইএফডি মেশিনের বিপরীতে একটি বিআইএন নম্বর দেওয়া হবে। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাধিক কাউন্টার থাকলে ওই একটি বিআইএন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি ইএফডি মেশিনের জন্য এনবিআর থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজেশন নম্বর দেওয়া হবে। এ নম্বর ছাড়া চালান প্রিন্ট দেওয়া যাবে না। বর্ণিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ইএফডি মেশিন ব্যবহার না করে তাহলে শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। ভ্যাট আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের অর্ধেক বা সমপরিমাণ অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে। এ ছাড়া অন্যূন ২০ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে ইএফডি মেশিন ব্যবহার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিধিমালায় কঠোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যে প্রতিষ্ঠান ইএফডি মেশিন স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাবে তারাও এ কাজ করতে পারবে।

ইএফডি মেশিন স্থাপনের বিষয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, সারা দেশে বড় বড় রিসোর্ট, হোটেল ও অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর ও পিওএস মেশিন ব্যবহারের পরিবর্তে ইএফডি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এনবিআরের সঙ্গে ইএফডি ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনলাইনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়