ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা

কেএমএ হাসনাত : ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বর্তমান সরকারের ১০ বছরের শাসনামলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। কৃষিখাতে বাজেট বরাদ্দ প্রতি বছরই বাড়ানো হয়েছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ তথা টেকসই, নিরাপদ, লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কৃষি উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূ-উপরিস্থ সেচ সুবিধার প্রসার, কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, কৃষিখাতে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন ফসলের উন্নত, অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত এবং কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওড় এলাকার পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ ও একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তা দেওয়ার জন্য নিয়মিতভাবে কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। কৃষিখাতে  ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। কৃষিখাতের মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে।

কৃষি ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণ, সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনে সতর্কতার বিষয় যুক্ত করে ২০১৩ এর কৃষি নীতিমালাকে পরিবর্তন করে নতুন ‘জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। কোন বস্তুকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে রূপান্তরের পর তা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হলো ন্যানো প্রযুক্তি। কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, মেধাসত্ত্ব, ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী এই নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ফসলের রোগ, কৃষিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ, ফসলের জাতভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা নির্ণয় ও পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ন্যানো সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

‘কৃষিতে ক্রপ জোনিং ম্যাপ’ ভিশন ডকুমেন্ট ২০৩০ প্রণয়ন, ১৭টি ফসলের হাইব্রিডসহ ২৮টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ২১টি ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন, জলমগ্নতা ও লবনাক্ততা সহিঞ্চু সাতটি উফশী জাত ও পাট পণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়ন করা হয়েছে। পাটের সুতা ব্যবহার করে জুট-কটন ফেব্রিকস তৈরি করে তা দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার বিপরীতে আবাদযোগ্য কৃষি জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কৃষিখাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় দেশ। বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে পৃথিবীর ২৮তম দেশ। এর মধ্যে আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চাল ৩৩৮ দশমিক ১৩ লাখ মেট্রিক টন, আলু ১১৩ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন, ডাল জাতীয় ফসল ১০ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন, তৈল জাতীয় ফসল ১০ দশমিক ৫৮ লাখ মেট্রিক টন এবং মসলা জাতীয় ফসল ৩৫ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে।

এছাড়াও ফসলের ১ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন এবং ১ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। বিদেশে তাজা শাক-সবজি ও ফল-মূল রপ্তানি করে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। একই সময়ে ১৩ মিলিয়ন ডলারের আলু রপ্তানি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য বিশ্বের ৮২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার রপ্তানি মূল্য ১১০ মিলিয়ন ডলার।

বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪১ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে যা ২০০৬ সালে ছিল ২১ লাখ। কৃষি ভর্তুকি হিসেবে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে যদিও ২০০৬ সালে তা ছিল ৭২৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/কেএমএ হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়