ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চিরতরে বিদায় হয়েছে ‘মঙ্গা’

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিরতরে বিদায় হয়েছে ‘মঙ্গা’

কেএমএ হাসনাত : সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিয়ে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। এলক্ষ্যে দুস্থ, অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সুবিধাভোগীর সংখ্যার পাশাপাশি টাকার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ‘মঙ্গা’ নামের অভিশাপ চিরতরে বিদায় হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদেসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লাখ ব্যক্তিকে বিভিন্ন ভাতা দেওয়া হয়েছে। শুধু ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তিন লাখ ৫০ হাজার বয়স্ক ভাতাভোগী এক লাখ ৫০ হাজার বিধবা এবং স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগী, ৭৫ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী এবং ১০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপবৃত্তি সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ এবং মাসিক ভাতার পরিমাণ ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীর সংখ্যা  এখন   ১২ লাখ ৬৫ হাজার জন এবং তাদের ভাতার পরিমাণ ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদেরও  উন্নয়ন নিশ্চিত করতে  ডিজঅ্যাবিলিটে ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন মাধ্যমে অটিজম এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ থেরাপি ভ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে।  অটিজম আক্রান্তদের  আরলি ডিটেকশন, অ্যাসেসমেন্ট, আরলি ইন্টারভেনশন নিশ্চিত করার জন্য ১০৩ প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, একটি করে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত  শিশুদেরও প্রাথমিক রোগ নিরূপণ, পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।

আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত এক লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।  ২০১৯ সালের মধ্যে আশ্রায়ন প্রকল্প এবং গৃহায়ণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ ৮০ হাজার পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।  হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে এ কার্যক্রমের আওতায় ২৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৩ জন দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।  সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ  ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম থাকবে না এবং উপকারভাগীরা প্রাপ্ত ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা প্রাপ্তদের জন্য বর্তমান বাজেটে চার হাজার ৩১৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৬৭ লাখ। ২০০৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২ শতাংশ যা ২০১৮ তে, বেড়ে হয়েছে ২৮ শতাংশ।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রকল্প সংখ্যা ২০০৩ সালে ১১টি ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫টিতে। এখাতে বরাদ্দ ২০০৬ সালে ১৪২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। তা থেকে ২০১৭ সালে বেড়ে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বরাদ্দ ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে বেড়ে ৯৬ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

দারিদ্র্য নিরসনে বর্তমান সরকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হাতে নিয়েছে যাতে ৬০ লাখ পরিবারকে পর্যাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ উপজেলায় ৯৫১ জন ভিক্ষুককে চিহ্নিত করে মোট ১২টি সমিতিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিজনের জন্য ৪ হাজার ৬০০ টাকার ফান্ড সংগ্রহ করে এর সমান টাকা বোনাস হিসাবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকে দেওয়া হয় প্রত্যেককে। এভাবেই ১২টি সমিতিতে ৩৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

এ পর্যন্ত ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ বিভাগে সমিতি গঠন করা হয়েছে ৫ হাজার ৬২৩টি। এসব সমিতির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৯৬০ জন। তা ছাড়া আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ১.৬ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে এই পুনর্বাসন কার্যক্রম ২.৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর পাশাপাশি বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিডি এর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা, অক্ষম ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মাতৃত্বকালীন ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ বৃদ্ধি এবং ভাতার মেয়াদ দুই বছরের জায়গায় তিন বছর নির্ধারণের পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা ছয় লাখ থেকে সাত লাখ করার প্রস্তাব করা হয়। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ করা হয়। একই নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগী ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৪ লাখ করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ২০০৯ সালে প্রদত্ত মাসিক ভাতা ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও নববর্ষ উপলক্ষে ৩ টি বোনাস পাচ্ছেন। ২০০৯ সালে দেশে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে এসেছে ১২ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার ২০০৯ সালে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৮ শতাংশের নিচে নিয়ে আসা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়