ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এমপিওভূক্তিকরণে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকবে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০১, ১৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এমপিওভূক্তিকরণে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকবে

কেএমএ হাসনাত : নয় বছর পর আবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করার চিন্তা করছে সরকার। এ বিষয়ে আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতে পারে। অর্থের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২০১০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এর পর নয় বছর দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে অপ্রতুল বরাদ্দের কারণেই দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।

তবে শিক্ষকদের জন্য আশার খবর হলো, আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এমপিওভূক্তির দীর্ঘদিনের জট খুলতেই আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটেই শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দ। তারপরও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মাত্র একবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর বহু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেও সেগুলো আর এমপিওভুক্ত হয়নি। গত বছর এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলে সরকার ওই বছরের জুলাই থেকে এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া শুরু করে।

অনলাইনে এমপিওভূক্তির জন্য প্রায় সাড়ে ৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৭৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বিবেচনা করেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অধীনে মাদ্রাসা ৫৫১টি এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বাড়তি খরচ হবে ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এজন্য অর্থ বরাদ্দেরও দাবি করেছে। অথচ স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তি খাতে আছে মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে এর পরিমাণ আরো অনেক কম। কিন্তু এত কম টাকায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা অসম্ভব। তাই কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি যাতে অর্থের অভাবে ঝুলে না থাকে সেজন্য আগামী অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে ৩৩২টি স্কুল এবং ২৯৯টি কলেজকে এমপিওভুক্তকরণের একটি তালিকা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে স্কুলের জন্য আগামী বাজেটে ২৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। আর কলেজের জন্য রাখা হতে পারে ৬২৭ কোটি টাকা। এছাড়া, মাদ্রাসার জন্য বাকি অর্থ বরাদ্দ রাখা হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও সংসদে জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৫৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশ্য চলতি বাজেটে শিক্ষায় এ বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ, যা আগের বছরের সমান।

সারা দেশে বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ ২ হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা ৭ হাজার ৬১৮টি। এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এ ব্যয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, যে সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, সেগুলোকে এমপিও দিলে বছরে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এমপিওভুক্ত নয় এমন সাধারণ স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ৭ হাজার ১৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বছরে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা প্রয়োজন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৯/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়