ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মৃতদেহ ৫ বছর মর্গের ফ্রিজে

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ২১ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৃতদেহ ৫ বছর মর্গের ফ্রিজে

মাকসুদুর রহমান : মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে খোকন নন্দী ওরফে রাজিব চৌধুরী ওরফে খোকন চৌধুরী। মুসলিম না সনাতন ধর্মালম্বী এ নিয়ে দুই স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় মৃতদেহটি পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গের ফ্রিজে।

বৃহস্পতিবার মর্গে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহটি ফ্রিজের ভেতর সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

মর্গের তত্ত্বাবধায়ক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘৫টি ফ্রিজের ৩টিই নষ্ট। এখানে প্রতিদিন যে মৃতদেহ আসে তা দুটি ফ্রিজ দিয়ে হয় না। এর মধ্যে আবার একটি মৃতদেহকে ৫ বছর ধরে রাখতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।’

রাইজিংবিডির প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একজন ওই মৃতদেহটি মাঝে-মধ্যে দেখতে আসেন। তিনি রাজিব চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী।’

রাজিব চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা রহমান বাবলির সঙ্গে তার পুরান ঢাকার বাসায় কথা হয়। বেসরকারি একটি কলেজের এই শিক্ষিকা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে নিউজ হয়েছে। কিন্তু কারো টনক নড়েনি। মৃতদেহটি এভাবে পড়ে আছে আর সহ্য করতে পারছি না। তিনি কি মরে গিয়েও শান্তি পাবেন না।’

হাবিবা বলেন, ‘১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এফিডেভিট (হলফনামা) করে ধর্মান্তরিত হয় খোকন। তার নাম হয় খোকন ওরফে রাজিব চৌধুরী। ১৯৮৪ সালের ২ জুলাই রাজিবের সঙ্গে বিয়ে হয়। তার আগের স্ত্রী আছে। তবে ৩০ বছর ধরে প্রথম পক্ষের স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে রাজিবের কোনো যোগাযোগ ছিল না।’

গত বুধবার ফার্মগেট এলাকার ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটে গিয়ে রাজিব চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী ও তার সন্তানদের খোঁজ মেলেনি। যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি।

তবে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মার্কেটের নিউ সান টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মোশারেফ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘খোকন নন্দীর ছেলে বাবলুই মার্কেট পরিচালনা করছেন। তিনি ভাড়া নেওয়া ও মার্কেট দেখভাল করেন। এর বাইরে কিছুই বলতে পারবো না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজিব চৌধুরীর মৃতদেহ দাবিদার দুই স্ত্রী। একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী হাবিবা রহমান বাবলি। অন্যজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মীরা নন্দী। মুসলিম স্ত্রীর দাবি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রাজিব চৌধুরী নাম রেখে তাকে বিয়ে করেছেন। অপরদিকে মীরার দাবি সনাতন ধর্ম বিশ্বাসে থেকেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ জুন দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা আক্তার ওরফে বাবলির বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে খোকন চৌধুরীকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ জুন ৭৮ বছর বয়সী খোকন মারা যান। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে স্বামীর মৃতদেহ দাফনের উদ্যোগ নেন বাবলি। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন খোকনের প্রথম স্ত্রী এবং দুই সন্তান বাবলু নন্দী ও চন্দনা নন্দী। একই বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার সহকারী জজ আদালত খোকনের মৃতদেহটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মরচুয়ারিতে সংরক্ষণের আদেশ দেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করতে পারেন। মারা যাওয়ার পাঁচ বছরেও মৃতদেহ দাফন বা দাহ না হওয়াটা খুব হতাশাজনক। এটা মৃতের প্রতি অবিচার। যেহেতু সম্পত্তির বিষয় জড়িত আছে। তাই আমি মনে করি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে মৃতদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুন ২০১৯/মাকসুদ/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়