ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাসুদা রশীদ ও প্রমোশন নিয়ে জাপা নেতাদের ক্ষোভ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২২ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাসুদা রশীদ ও প্রমোশন নিয়ে জাপা নেতাদের ক্ষোভ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ডাকে সাড়া দেননি দলটির অধিকাংশ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে এই প্রথম যৌথসভা ডাকলেও দলের সিনিয়র নেতারা তার এই কর্মসূচিতে যাননি। ফলে এরশাদের অবর্তমানে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার প্রথম যৌথসভায় রওশনপন্থীরা যেমন যাননি, তেমনি যাননি প্রাক্তন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারপন্থীরাও।

জানা গেছে, শনিবার এরশাদের বনানী অফিসে চার ঘণ্টাব্যাপী জাতীয় পার্টির এই যৌথসভায় ২২ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪ জন সাংসদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জি এম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ মাত্র ১১ জন এমপি। তাদের অধিকাংশই আবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যও। আর জাতীয় পার্টির প্রায় ৫০ সদস্যের বিশাল প্রেসিডিয়াম তালিকার মধ্যে সংসদ সদস্য নয় এমন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৯ জন।

জি এম কাদেরের ডাকে সাড়া না দেওয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী উপনেতা রওশন এরশাদ, জ্যেষ্ঠনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, প্রাক্তন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রাক্তন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন, সেলিম ওসমান এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, নাসরিন জাহান রত্না, সুনীল শুভ রায়সহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার।

প্রেসিডিয়াম সভায় টাকার কারণে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি প্রফেসর মাসুদা রশীদ চৌধুরীর পদ পদবি স্থগিত করা, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের ৪২ আসন থেকে ২২ আসনে নেমে আসা, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয়ভাবে খোঁজ না নেওয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, পার্টিতে গ্রুপিং, অযোগ্যদের প্রমোশনসহ নানান ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম ও এমপিরা।

দলটির সূত্র জানায়, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশিদ এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনে আমাদের ৪২টি আসন আওয়ামী লীগের সাথে জোটগতভাবে চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সেই আসন সংখ্যা ২২ এ নেমে আসল। কী কারণে এটা হলো তা আমাদের জানার বিষয়। তিনি বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য বলেন।

টাকার জন্য দলের এমপি প্রফেসর মাসুদা রশীদ চৌধুরীর পদ স্থগিত করায় শীর্ষ নেতাদের কড়া সমালোচনা করেন সদ্য প্রমোশন পাওয়া দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন এমপিকে টাকার জন্য পদ স্থগিত লজ্জাজনক। এটি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা মুখ দেখাতে পারি না। বিষয়টি আলাচনার মাধ্যমেও সমাধান করা যেত।

প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ঠিক করতে হবে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের ভেতর সুবিধাভোগীরা সব সময়ই ফায়দা লুটে থাকেন। তাদের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর অভিযোগ, এতো বড় একটি জাতীয় নির্বাচন করলাম। আমি ও আমার কর্মীরা আহত হলো, কেউ একটু খোঁজ নেয়নি। আমার প্রতি অনেক অবিচার করা হলো। এভাবে দল চলে না।

প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, যেনতেনভাবে পার্টিতে প্রমোশন দেওয়া যাবে না। দলে এসেই যেন পদ ও নমিনেশন না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগেও এরশাদ পরিবারে ছিলাম। আগামীতেই এরশাদ পরিবারের নেতৃত্বেই আছি।

পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে হলে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল শক্তিশালী না হলে পার্টি শক্তিশালী হবে না।

সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘প্রফেসর মাসুদা রশীদ চৌধুরীর বিষয়টি তদন্ত করে সমাধান করা হবে। সেটা  কন্ট্রাডিক্টরি কথা। উই ফাইন্ড দ্য ফ্যাক্টস। ফারদার আলোচনা হয়েছে। তবে যেটা আমি জানি, সেটা বলতে পারব না’।

তিনি বলেন, আগামীতে সবার মতামতের ভিত্তিতে জাপাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া দলের ভিতরে যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় আট বিভাগে ৮টি দল তৈরি করে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে করণীয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৪ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত ঢাকার মতিঝিলে ১০টায় মতিঝিল জাতীয় পার্টির বিভাগীয় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

২৪ জুন ঢাকা ও ময়মনসিংহ, ২৫ জুন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, ২৬ জুন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং ২৭ জুন খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

যৌথসভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য- কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, মো. আবুল কাশেম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. আজম খান, সোলায়মান আলম শেঠ, আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক, আলহাজ্ব সফিকুল ইসলাম সেন্ট, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীরজাদা শাহজাদা আল মনির, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখ্ত, কাজী মামুনুর রশিদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আব্দুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, আদেলুর রহমান, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৯/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়