ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উত্তাপ ছড়াচ্ছে দুই ছাত্র সংগঠন

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ২৯ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উত্তাপ ছড়াচ্ছে দুই ছাত্র সংগঠন

এসকে রেজা পারভেজ : নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মুল দলের রাজনীতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়লেও এই দুই ছাত্র সংগঠন নিয়ে ঘাম ঝরছে দল দুটির নেতাদের। বেশ কিছুদিন ধরেই সংগঠন দুটিতে পৃথক ইস্যুতে সংকটের সৃষ্টি হলেও সমাধান না হওয়ায় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে গড়াচ্ছে। 

গত ১৩ মে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর থেকেই তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে পদবঞ্চিতরা। এ নিয়ে পদবঞ্চিতদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনাও ঘটে। এরপরও কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে থাকলে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গণভবনে ডেকে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা হবে বলে জানান এবং ১৬ জনের নাম প্রকাশ করেন। অন্যদিকে পদবঞ্চিতরা এর পাল্টা হিসেবে ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্য’ ৯৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তাদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে এখন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশন করছেন পদবঞ্চিতরা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, কমিটিতে শতাধিক বিতর্কিত পদধারী আছেন। এর মধ্যে  ২৫ জন বিবাহিত, ১৯ জনের পরিবার সরাসরি বিএনপি কিংবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, আসামি, ব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত, সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত, ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, চাকরিজীবী এবং রাজনীতিতে নিস্ত্রিয় এমন ব্যক্তি রয়েছেন।  

ছাত্রলীগের আগের কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে কমিটির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন চালিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি।  তাতেও সাড়া না পেয়ে শুক্রবার থেকে আমরণ অনশনে বসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ সংকট সমাধানে যোগযোগ করেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দালন চলবে। ’

এদিকে ছাত্রলীগের সৃষ্ট সংকট সমাধান প্রশ্নে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এর সমাধান তার কাছে নেই।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ব্যাপারে আমাদের চারজন সহকর্মীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব দিয়েছেন। ছাত্রলীগ সম্পর্কে যদি কিছু জানতে চান যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা জবাব দেবেন।’

দায়িত্বপ্রাপ্তরা সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে-জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা সফল কি ব্যর্থ তার বিচার প্রধানমন্ত্রী করবেন। আমি নিজেও এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু একটা জানি না, অসুস্থ হয়ে বিদেশে ছিলাম। এ বিষয়ে অনেক কিছু আমার জানা নাই। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ভালো বলতে পারবেন।’

ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল।  

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছাত্রলীগে কোনো সংকট নেই।  যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে যারা যোগ্য, তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া হবে। কিন্তু তারা এসব কথা না শুনে কোনো কারণ ছাড়াই অযৌক্তিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এভাবে আমরণ অনশন দিয়ে কি সমাধান হবে?’

‘তারা কৃত্রিমভাবে এই সংকট সৃষ্টি করছে। তারা যখন আমাদের কথা শুনছে না তখন বলতে হবে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসব কাজ করছে। আমরা এখন পর্যন্ত তাদের বহিস্কারের মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই দিকে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলে এখন মনে হচ্ছে না’, বলেন সংকট সমাধানের দায়িত্ব থাকা এই নেতা।

এদিকে ছাত্রলীগের মতো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেও সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।  সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটি আনতে কাউন্সিলের জন্য বয়সের একটি সীমার শর্ত আরোপ করেন বিএনপির দায়িত্বশীলরা। মুলত, এরপরই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন নামে একটি পক্ষ, যারা ছাত্রদল করার ক্ষেত্রে বয়সের শর্ত মানেন না। আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বদানকারীরা মুলত আগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২০০০ সালের পরের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়। এর প্রতিবাদে ১১ জুন থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে নামেন ছাত্রদলের সাবেক কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। তাদের দাবি উপেক্ষা করে কাউন্সিল করতে গেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা, বিদ্যুৎ লাইন টেনে দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটে। তারা এর জন্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দায়ী করে তাকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ারও দাবি তোলেন। আন্দালনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে অপমানিত হন ছাত্রদলের কাউন্সিলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করেন বিএনপির চার নেতা। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতারা বৈঠকে তাদের জানিয়েছেন বয়সের সীমা তুলে দেওয়া ছাড়া তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবে না। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে বিষয়টি স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানান দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এখন তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈঠকের কারণে শনিবার রাত পর্যন্ত আন্দোলন মুলতবি রেখেছে ছাত্রদলের আন্দোলনেকারীরা।      

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বৈঠকে ছাত্রদলের সংকটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে।’

এ সম্পর্কে ছাত্রদলের প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বয়সের সীমারেখা তুলে দেওয়া ছাড়া আমরা কোনো দাবিই মানবো না। বয়সের শর্ত তুলে দিয়ে কাউন্সিল হোক, এতে আমরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো প্রয়োজনে। বয়সের শর্ত তুলে দেওয়ার দাবিতে যারা আন্দোলন করছে দলের জন্য তাদের ত্যাগ অনেক। গত কয়েক বছরে এরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে।’


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৯/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়