ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রেকর্ড অভিযান

প্রবৃদ্ধি ৬৪ ভাগ, এগিয়ে যাচ্ছে ভ্যাট গোয়েন্দা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২২ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রবৃদ্ধি ৬৪ ভাগ, এগিয়ে যাচ্ছে ভ্যাট গোয়েন্দা

ছবি ইন্টারনেট

এম এ রহমান মাসুম : সার্বিক রাজস্ব আহরণে যেখানে দুই অংক ছুঁতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সেখানে ৬৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

সদ্য বিদায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সংস্থাটি ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। যা কিনা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৭২০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ৬৪.৫৫ শতাংশ। যেখানে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৯.৮৬ শতাংশ।

ভ্যাট গোয়েন্দার উর্ধ্বতন একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত এবং রাইজিংবিডির বিশ্লেষণে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে আদায়কৃত ভ্যাটের মধ্যে ১ হাজার ৮৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা উদঘাটিত (ফাঁকি থেকে আদায়) রাজস্ব এবং ১১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা সরাসরি আদায়কৃত ভ্যাট। যেখানে আগের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট আদায়কৃত ভ্যাট ছিল ১ হাজার ১১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদঘাটিত ভ্যাট ছিল ১ হাজার ৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং আদায়কৃত ভ্যাট ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম আবদুল্লাহ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, গত ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন ও আদায় সম্ভব হয়েছে। ভ্যাট আদায়ে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার কারণেই মূলত ভ্যাট আদায় বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই জোরদার করা ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেশি বেশি অভিযান। এছাড়া রাতে টহল দিয়েও ভ্যাট আদায় বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট আছে। ভ্যাট গোয়েন্দায় ৫০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদ থাকলেও আছে মাত্র ২৩ জন। এই জনবল নিয়ে অডিট, অভিযান ও টহলের কাজ করা কঠিন। আমাদের লোকবল বৃদ্ধির প্রস্তাব এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটি মোট ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা বা অডিট ও অভিযান পরিচালনা করে ভ্যাট গোয়েন্দারা। এর মধ্যে ইন্সুরেন্স খাতে ১৩টি, সেবা খাতে ১৫টি ও উৎপাদনকারীর ১৯টিসহ মোট ৫১টি প্রতিষ্ঠানে অডিট করে ভ্যাট গোয়েন্দা। ওই বছর ২৩টি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান, ১৫টি সেবা ও ব্যবসা খাতসহ মোট ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, ৫১টি প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা বা অডিটে থেকে আদায় মোট ৩৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা হয়। গোপন তথ্যে ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত পর্যায়ে ৫৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ফাঁকি ধরা পড়ে। আর ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন স্পটে টহল দিয়ে ১৪ লাখ টাকা আদায় করেছে।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। একই বছর সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৭৬৫.৫৯ কোটি টাকা বেশি।

অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আরো বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। যেখানে প্রবৃদ্ধি হার ছিল প্রায় ৯৩.২১ শতাংশ। আগের ২০১৬-১৭ সালে বিভিন্ন সময়ে নিরীক্ষা, তদন্ত, অভিযান, টহলে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ৫৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৫৩৮.৪৯ কোটি টাকা কম। ওই বছর মোট ভ্যাট আদায় হয় ১ হাজার ১১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

বেশ বড় ধরনের সফলতা দেখাতে সক্ষম হলেও প্রচার কেন এত কম- এমন প্রশ্নের জবাবে ভ্যাট গোয়্ন্দা অধিদপ্তরের ডিজি আরো বলেন, আমরা খুব বেশি প্রচার চাচ্ছি না। কাজটাই বড় দেখি, প্রচার নয়। এছাড়া বেশি প্রচারে অনেক সময় কাজে বাঁধার সৃষ্টি হয়। তবে এখন মনে করছি জনসচেতনতার স্বার্থে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।

নিরীক্ষার মাধ্যমে ভ্যাট ব্যবস্থায় অধিকতর শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করে এবং মূসক ফাঁকি রোধে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে এটি আরো জোরদার করা হবে বলেও জানান আবদুল্লাহ খান।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়