ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনিয়মের বেড়াজালে পানগাঁও কাস্টমস

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১১, ২৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনিয়মের বেড়াজালে পানগাঁও কাস্টমস

এম এ রহমান মাসুম: রাজস্ব আদায় ও কন্টেইনার খালাসে পিছিয়ে পড়ছে পানগাঁও কাস্টম হাউজ। এজন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণেও ঘটনার মিল পাওয়া যায়। স্টেশনটিতে গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার খালাস কমেছে ২৯৯টি। কমেছে রাজস্ব আদায়ও। এক অর্থবছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায় কমেছে ৫৪২ কোটি টাকা অর্থাৎ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি (-৩৪.৮৮) শতাংশ।

অন্যদিকে কাস্টমস কর্মকর্তা কর্তৃক পানগাঁও আইসিটি পোর্ট ব্যবহারকারী আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের হয়রানি এবং কন্টেইনার খালাসে ঘুষ লেনদেনের বাড়তি খরচে ব্যবসায়ীরা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। অনেক সময় ঘুষ দেওয়ার পরেও কাস্টম কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টম নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুল্ক স্টেশনগুলোতে আমরা মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি। ব্যবসায়ীরা কোনো সমস্যা পড়লে আমাদের কাছে আসুক। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এনবিআর সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৩০০ কোটি টাকা কম। ওই অর্থবছরে এনবিআরের বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮০ কোটি টাকা ও আদায় হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কন্টেইনার খালাসও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার আমদানি কমেছে ২৯৯টি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পানগাঁও পোর্টে কন্টেইনার এসেছে ১ হাজার ২২৩টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছে মাত্র ৯২৪ কন্টেইনার পণ্য।

পানগাওঁ কাস্টমস হাউজের কমিশনার ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, কাস্টমসের একজন সহকারী কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত বৃহস্পতিবার আটকে রাখা হয় ৮৮টি কনটেইনার। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অনৈতিক সমঝোতায় রাত সাড়ে ১১টায় সেই কনটেইনারগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা।

হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ করার শর্তে তিনি জানান, আমদানিকারকদের পছন্দের সিএন্ডএফ এর মাধ্যমে পণ্য খালাসের চাপ দেন কাস্টম হাউজের এক কর্মকর্তা। এতে আমদানিকারকরা রাজি না হলে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এক্ষেত্রে কখনো ল্যাবটেস্ট, আবার কখনো শতভাগ কায়িক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। এছাড়া এইচএস কোডের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে চালান আটকে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে কম শুল্কের পণ্য বাড়তি শুল্ক দিয়ে ছাড় করতে হয়। এক্ষেত্রে পোর্ট ও শিপিংলাইনে গুণতে হয় বাড়তি অর্থ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিটি চালান শুল্কায়নে উৎকোচ আদায় করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি এক নারী উপ-কমিশনারের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে করেন ওই ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে অন্য এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, গত বছর ব্যাটারি আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের ফাইল আটকে রেখে পানগাওঁ ঐ নারী কর্মকর্তা ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। ফাইল আটকে থাকলে মালপত্র বন্দরে পড়ে থাকবে, আর তাতে তার আর্থিক ক্ষতি হবে এই চিন্তা করে ওই কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেন ওই ব্যবসায়ী। এ ঘটনার ভিডিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সোনিয়া আক্তার নামের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে তিনি। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেও ভিডিও ও অভিযোগের সাথে ওই নারী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানান।

অতিরিক্ত কমিশনার সৈয়দ আতিকুর রহমান ও উপ-কমিশনার সোনিয়া আক্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। এমনকি মোবাইলে খুদেবার্তা দিলেও কোনো উত্তর দেননি তারা।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/সাজেদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়