ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্প্লিন্টার কেড়ে নিয়েছে খাদ্যনালীর ৯ ইঞ্চি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ২০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্প্লিন্টার কেড়ে নিয়েছে খাদ্যনালীর ৯ ইঞ্চি

এসকে রেজা পারভেজ: একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ট্রাকের পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন। গ্রেনেড হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে যখন তার চিকিৎসা দেয়া হয়, তখন খাদ্যনালীর ৯ ইঞ্চি কেটে ফেলতে হয়েছে স্প্লিন্টার থাকার কারণে।

সোমবার রাইজিংবিডির কাছে বললেন ভয়াল সেই দিনের কথা। তারই বয়ানে তুলে ধরা হলো সেই দিন ও তার পরবর্তি সময়ের অভিজ্ঞতার কথা-

‘ওইদিন ছিলো গোপালগঞ্জের তুষার হত্যাকাণ্ড ও সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি মিছিল। সেই শান্তি মিছিলে যোগ দিতে সেদিনের বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে সমাবেশ স্থলে আসেন। সমাবেশটি ছিলো ট্রাকের ওপর একটি অস্থায়ী মঞ্চে। ওনার বক্তব্য শেষ। উনি নামতে যাবেন এমন সময় আমরা একটি বিকট শব্দের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন ট্রাকের সিড়ির কাছে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, বাহাউদ্দিন নাছিম, আমি, এনামুল হক শামীম, পান্না, পঙ্কজ দেবনাথসহ অনেক সাবেক ছাত্রনেতা ছিলাম। কথা ছিলো আপাকে নিয়ে আমরা মিছিল সহকারে ধানমন্ডিতে যাবো।

গ্রেনেডের বিকট সেই আওয়াজ শোনার পর আমি পড়ে গেলাম। এরপর আরও প্রায় ১১/১২টি গ্রেনেডের আওয়াজ পেলাম। চারিদিকে প্রচণ্ডরকম ধোয়া, মানুষের আহাজারি, দৌড়াদৌড়ি। আমাকে প্রথমে ধরে নিয়ে হাসপাতালে পাঠান আপার ড্রাইভার আলী হোসেন আর শাহজাহান। ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। তখন আমার সারা শরীর রক্তে ভেজা। তবে তখনও আমার জ্ঞান ছিলো। স্প্লিন্টারের প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করছি। সময়ের সাথে সাথে ব্যাথা অসহ্য হতে থাকে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। তখন আমার কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে ডেলটা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
 
পরের দিন আমার অপারেশন করা হয়। খাদ্যনালীর ৯ ইঞ্চি নাড়ি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। এরপর আমার নেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান। কষ্টের বিষয় হচ্ছে আজও স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা সারা শরীরে আছে। রাতে শরীরে থাকা স্প্লিন্টার খুব কামড়ায়। ঘুমের খুব সমস্যা হয়। পা টিপলে একটু ভালো লাগে। তখন ঘুমাই। শিং মাছের কাঁটা ফুটলে যেমন কামড়ায় স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা তারচেয়েও বেশি। তবে ধরণটা একই রকম।
 
আল্লাহ ওইদিন আমার নেত্রী আর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আমাকেও রক্ষা করেছেন। আমার নেত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এই হামলা হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে অপশক্তি, ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো সেই অপশক্তির প্রতিনিধিরাই ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো।’

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এস এম কামাল হোসেনবলেন, ‘শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয়েছে। একুশে আগস্টের হামলার সাথে যারা যুক্ত তাদেরও বিচার হয়েছে। কিন্তু আমরা তারেক জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলাম। আজ ১৫ বছর পর আবারও আহ্বান করবো, তার যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। কারন দৃষ্টান্ত থাকা উচিত, কোনো ষড়যন্ত্রকারীই রক্ষা পায় না।’

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৯/রেজা/নবীন হোসেন/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়