ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে 

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২২, ২৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে 

কেএমএ হাসনাত : পুঁজি বাজারে ক্রমাগত দরপতন ঠেকিয়ে বাজার চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। 

এবিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গত কয়েক মাসের পুঁজি বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।  

সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ নিয়ে এলে অবশ্যই শেয়ার বাজারে সেই কোম্পানি লিস্টেড হতে হবে। আগে থেকেই ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানো, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কাজে লাগানো, প্লেসমেন্টের নৈরাজ্য বন্ধ, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির চাপ কমানোর পদক্ষেপ, দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ঠেকানোর উদ্যোগসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।

সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গত কয়েক মাসের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য চেয়েছেন।  গত ছয় মাসে ব্যাপক দরপতনের কারণে পুঁজিবাজার ৪৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আইসিবির পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটি এ পর্যন্ত কি ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তার বিস্তারিতভাবে জানাতে তাগাদা দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে কর্পোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সভাপতি করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটি করা হয়েছিল।

এ কমিটি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে যেসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, সেগুলোর শেয়ারভিত্তিক যৌক্তিকতাসহ পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটির একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দ্রুত পাঠাতে  অনুরোধ করা হয়েছে।

আইসিবির পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটি বেসরকারি ব্যাংকসহ সরকারি সোনালী, জনতা এবং অগ্রণী ব্যাংক যাতে দেশের স্টক মার্কেটে আসতে পারে সেই জন্য এই কমিটি এক সময় কাজ করেছিল।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহকারী সচিব মো. মখফার উদ্দিন খোকন স্বাক্ষরিত চিঠিতে সর্বশেষ তিনমাসের তথ্য-উপাত্ত প্রমাণসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল অনমনীয় ঋণবিষয়ক কমিটির বৈঠকে সরকারের লাভজনক কোম্পানি বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড শ্রীপুরে ১৫০ মে. ও. ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জার্মান ব্যাংককে এফডব্লিউআইপি এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেন। 
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি সব লাভজনক প্রতিষ্ঠান শেয়ার বাজারে যাতে আসে তার ব্যবস্থা করা হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে সরকারি কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারের চাহিদা মোতাবেক আসতে থাকবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান দুই বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ  ও অ্যাভেন্টিসে ৪৫ শতাংশ ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এই কোম্পানি দুটোকে দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই অনুরোধে কোন সাড়া দেয়নি।

সরকারি মোট ২৫টি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১০ সালে। নয় বছর পার হলেও কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়তে পারেনি। কবে ছাড়া হতে পারে, সেটিও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড বা বিটিসিএল, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড বা এলপিজিএল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে নয়টি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি। এ ছাড়া পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তিনটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে চারটি।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার ছাড়ার সর্বশেষ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এই এক বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ড নিবিড়ভাবে তদারকি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য সেই সময়ের অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

প্রতি দুই মাস পর কমিটির বৈঠক করে কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার কথা ছিল। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছে- পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বা আইসিবির প্রতিনিধি। কমিটির আহ্বায়ক মুসলিম চৌধুরী পরবর্তীতে অর্থসচিব এবং এরপর বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ওই কমিটির কাজ থেকে যায়। ওই কমিটির কাজ আবার শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়। 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৯/হাসনাত/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়