ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ আইএমএফের

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ আইএমএফের

কেএমএ হাসনাত : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম দূর করে এ খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল’ নামে একটি নিরপেক্ষ সংস্থা গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এ ছাড়া সংস্থাটি আর্থিক খাতের বেশ কিছু কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেওয়ারও সুপারিশ করেছে।

এ বিষয়ে আইএমএফ এর ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি রিভিউ (এফএসএসআর) মিশন ১২ দিনের সফরে রোববার বাংলাদেশ সফরে আসছে।

এ সফরে আসার আগে সংস্থাটি সরকারের কাছে ‘ব্যাসেল কোর প্রিন্সিপ্যালস ডিটেইলড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি  জানতে চাওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ যেসব সুপারিশ করেছিল সে সুপারিশের ৮টি বিষয়ে কী অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেয়ার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বর্তমানে এ ক্ষমতা অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হাতে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারে।

এছাড়াও সংস্থাটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা কমানো এবং স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সংস্থাটি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দূর করার জন্য একটি ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল’ গঠনেরও সুপারিশ করেছে।

সূত্র জানায়, আইএমএফের পক্ষ থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিদ্যমান কয়েকটি ধারার সংশোধন চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ৪৬ ধারা।

এ ধারায় ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক, চেয়ারম্যান অপসারণের ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা' বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে যে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির চেয়ারম্যান বা কোনো পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর তাহলে জনস্বার্থে ওই চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীকে তাহার পদ থেকে অপসারণ করতে পারবে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট একই ধারায় আবার উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার কর্তৃক মনোনীত বা নিযুক্ত কোনো চেয়ারম্যান বা পরিচালক, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, তার ক্ষেত্রে এই ধারার কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না।

এ ধারার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারায় ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশে ব্যাংকের হাতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকের ওপর প্রয়োগ করতে পারে, সরকারি ব্যাংকের ওপর প্রয়োগ করা যায় না। কারণ সরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের নিয়োগ দিয়ে থাকে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিয়োগ দিয়ে থাকে।

সরকার নিয়োগ দেওয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা মতে সরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। তাই সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি বা বেসিক ব্যাংকের পাহাড়সম দুর্নীতি হওয়ার পরও এই ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএমএফের পক্ষ থেকে আরো যে সব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন। ব্যাংকের অডিট কমিটি ও রিস্ক কমিটিতে অধিকহারে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি পে-স্কেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন স্টাফদের সরিয়ে আনা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ম্যান্ডেটের সংশোধনী।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের মিশন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আসছে। তাদের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এবার মিশনের মূল ফোকাস থাকবে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিনেন্স সংশোধনীর বিষয়টি। এর আগেও আইএমএফের পক্ষ থেকে এ সংশোধনী চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে এবার তারা যে নতুন করে ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে এবার অগ্রগতি হতে পারে।

মিশনটি তাদের সফরকালে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবিরসহ অর্থমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/হাসনাত/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়