ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তীর সংরক্ষণ খরচে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তীর সংরক্ষণ খরচে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : দেশের নদীগুলোর মতো এগুলোর তীর সংরক্ষণ খরচেও নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। বছর ঘুরলেই নদীর তীর সংরক্ষণ খাতের ব্যয় বেড়েই চলেছে।

কাজের মেটারিয়াল একই হওয়া সত্ত্বেও নদীর তীর সংরক্ষণ ও রক্ষা ব্যয়ে রয়েছে আকাশপাতাল তারতম্য। প্রতি কিলোমিটার তীর রক্ষা বা সংরক্ষণ ব্যয়ের ব্যবধান ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা।

কোনো ধরণের সামঞ্জস্যতা নেই পানি সম্পদ খাতের নদীর তীর সংরক্ষণ ব্যয়ের মাঝে। লাগামহীন উন্নয়ন খরচে কোনোটার ব্যয় কিলোমিটারে ১২ কোটি টাকা আবার কোনোটার ব্যয় ৭১ কোটি টাকার বেশি।

পরিকল্পনা কমিশন এই সব ব্যয়ের ব্যাপারে কোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছে না। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) থেকে দেয়া পরামর্শক ও সুপারিশ মন্ত্রণালয়গুলো আমলেই নিচ্ছে না।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি  প্রকল্পের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, প্রস্তাবিত প্রতিটি প্রকল্পের তীর রক্ষা ব্যয়ের মধ্যে কোনো ধরণের মিল নেই। আবার একই নদীতে এই ব্যয়ের ভিন্নতাও দেখা গেছে।

৮৩২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত বগুড়া জেলার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ ও পূণর্বাসন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ দেখানো হয়েছে ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এখানে ৪ দশমিক ১১৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করার কথা। যার জন্য মোট ব্যয় হবে ২৯৩ কোটি ৮১ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

অন‌্যদিকে সিলেটের কালকিনি-কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণ চলমান প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে তীর সংরক্ষণ খরচ হচ্ছে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। একইভাবে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণে কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার টাকা। এখানে মোট ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নোয়াখালীর মুসাপুরে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১শ’ কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অন্যান্য প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষনে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মার শাখা নদীর ডান তীরের ভাঙ্গন থেকে নওয়াপাড়া এলাকা এবং পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙ্গন থেকে চরআত্রা এলাকা রক্ষা করার জন্য ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প হয়েছে। যেখানে নদীর ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪৬৮ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ফলে এখানে প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করতেই খরচ হবে ৫৩ কোটি ৮১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের অপর প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। আর প্রকল্পটি হলো, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট ও ফুলবাড়ি উপজেলাধিন ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই দুই প্রকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজের ব‌্যয়ের ব্যবধান ৩২ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চলমান অন্যান্য প্রকল্পের ব্যয়ের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, তীর সংরক্ষণ ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি নির্দেশনা না মেনেই প্রস্তাবনা তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণেই প্রকল্পের খরচে কোনো ধরণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। পানি সম্পদ খাতে বিশেষ করে নদী ড্রেজিং, তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। বছর পার হলেই এই সব কাজে কিলোমিটার প্রতি খরচ বেড়ে যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকারও বেশি। 

পাউবি প্রকৌশলী বলছে, অনুমোদিত নকশা এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত রেট সিডিউল অনুযায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা ও স্থাপনার উপর প্রধান প্রকৌশলীর মতামতসহ কারিগরি কমিটি কর্তৃক ভেটিং নিয়ে এই প্রাক্কলন প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সেচ উইং-এর যুগ্ম-প্রধান বলছেন, নদীর তীর সংরক্ষণের কাজে চেইনেজ, স্থাপন, নকশা ও এ কাজে ব্যবহৃত মালামালের বিস্তারিত বিবরণ প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় না। এসব খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা উচিত। প্রতিটি নদীর তীর সংরক্ষণে বেশির ভাগই একই ধরণের মালামাল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্যয়ের ব্যবধান মাত্রাতিরিক্ত। সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় প্রতি কিলোমিটারে বা মিটারে এই ব্যয় অত্যাধিক। চলমান প্রকল্পে এই ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে ৪৪  কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং সমাপ্ত প্রকল্পে ৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসিবুল/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়