ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডিএনডি এলাকায় পানি সরে না অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিএনডি এলাকায় পানি সরে না অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার বণ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার অপরিকল্পিত নগরায়ন। এ কারণে ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে গতি আসছে না। ফলে এখনো জলাবদ্ধতার সমস্যা মোকাবিলা করছেন ডিএনডির ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে কয়টি সমস‌্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ‌্যে অপরিকল্পিত নগরায়নের বিষয়টিই প্রধান হয়ে উঠে এসেছে। 

সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি এরই মধ্যে প্রধান তদারকি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে।

প্রকল্পটি যখন হাতে নেয়া হয়, তখন প্রকল্পের ডিপিপি’র উপর পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় বলা হয়েছিল, প্রকল্প এলাকাটি ঢাকার শহরের কাছে হওয়ায় স্বাধীনতার পর এখানে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে ওঠে। ডিএনডি এলাকায় ভূমি ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। কৃষি জমিগুলো বাসভবন, শিল্পপ্লট কিংবা রাস্তায় রূপান্তরিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ খাল, ড্রেন ইত্যাদি স্থানীয় জনগণের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে অচল হয়ে যায়। পাশাপাশি বন্যার কারণে বিদ্যমান পাম্পগুলো বন্যার পানি ও গৃহস্থালির অতিরিক্ত বর্জ্য পানি নিষ্কাশনে অসমর্থ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অবৈধ দখলের কারণে নিষ্কাশন খালগুলোর ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এসব সমস্যা এখনো দৃশ্যমান আকারে দেখা দিয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অপরিকল্পিত বাসভবন ও শিল্পপ্লট, দখল হওয়া খাল এবং অনুমোদনের চেয়ে সরু ড্রেন পেয়েছেন। যেগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার দখলবাণিজ্য। এরই মধ্যে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় আরো কিছু স্থাপনা সমস্যা হিসেবে দেখছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। কিছু উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে,  কয়েকটি জায়গায় গ্যাসের লাইনে পানির সংযোগ, পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন স্থানে পাকা রাস্তা নির্মাণ ও খাল দখল। এর মধ্যে একটি খালের জমিতে অবৈধভাবে ছয়তলা বাড়িও পেয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামতসাপেক্ষে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বসতে যাচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মাহমুদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন‌্য নির্ধারিত বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে এটি একটি। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং সার্বিক বিষয়ে করণীয় নির্ধারনে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে বসতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (২য় পর্যায়)" শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাটি আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। সভায় প্রকল্প এলাকার দুজন মেয়র, সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনকালে ভবিষ্যতে প্রকল্প এলাকায় নদী খনন, নিচু এলাকায় উঁচু করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা ও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে প্রকল্প এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে সম্পৃক্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।

প্রকল্পটি ‘রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে’র কথা উল্লেখ করে এটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।

হাতিরঝিলের আদলে সাজবে ডিএনডি এলাকা

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিএনডি এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবেশগত মান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রকল্প এলাকার জনগণের স্বাভাবিক জীবনমান নিশ্চিত হবে বলে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে।

হাতিরঝিলের প্রকল্পের কাজকে মাথায় রেখেই এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। এখানকার খালগুলো দখলমুক্ত করার পর এর পাড়গুলো বাঁধাই করে দেওয়া হবে। দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। খালগুলোয় চলবে ওয়াটার ট্যাক্সি। ওই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করা যাবে। এছাড়া ইটিপির (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নিয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এর বাইরে এ প্রকল্পে রয়েছে শিমরাইল ও আদমজি এলাকায় ২টি পাম্প স্টেশন নির্মাণ, ফতুল্লা, পাগলা ও শ্যামপুরে ৩টি পাম্পিং প্লান্ট নির্মাণ, ডিএনডি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ৭৯টি কালভার্ট, ২টি ক্রস ড্রেন, ১২টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ। এছাড়া ৫২টি বিদ্যমান ব্রিজ ও কালভার্ট মেরামত, শিমরাইল, আদমজিনগর, পাগলা, শ্যামপুর ও ফতুল্লা পাম্প স্টেশন বা প্লান্টের কমান্ড এরিয়ায় ৯৩.৯৮ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন, ৩২ হাজার ৫০০ ঘনমিটার অতিরিক্ত সংযোগ খাল পুনঃখনন ও ৯৩.৯৮ কিলোমিটার পুনঃখননকৃত খালের তীর উন্নয়ন এবং ১৩.৫০ কিলোমিটার হেরিংবোন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে নানা দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হয় ডিএনডির ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা। এসময় জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের পানি। ফলে বছরের প্রায় ৫ মাস জলাবদ্ধতার মধ্যেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ডিএনডিবাসীদের।

জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় খাল দখল ও ভরাট করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়।

এসব পরিস্থিতির উন্নয়নে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেক সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) সেচ প্রকল্প এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনৈ ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডিএনডি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (ফেইজ-২)’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ডিএনডি এলাকার পানি নিষ্কাশনের উন্নয়নে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী।



ঢাকা/হাসান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়