ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

তারুণ‌্যকে কি ধ্বংস করছে ই-সিগারেট?

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ২২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তারুণ‌্যকে কি ধ্বংস করছে ই-সিগারেট?

দুই আঙুলের মাঝখানে কলমের মতো ছোট একটা পাইপ। মুখে ধরে এক টান। মুখ সামান‌্য হা করলে বের হবে ধোঁয়া। অনুভূত হবে এক ধরনের নেশা।

কলমের মতো দেখতে এই যন্ত্রের নাম ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট। যন্ত্রটি চলে ব‌্যাটারি দিয়ে। এর ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ যা ব‌্যাটারির মাধ‌্যমে গরম হয়। এতে সৃষ্টি হয় ধোঁয়া। যা মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে।

ধূমপান ছেড়ে ই-সিগারেটে ঝোঁক

অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু সহজে ছাড়তে পারে না। যে কারণে ধূমপান ছাড়তে অনেকই ঝুঁকছেন প্রযুক্তি পণ্য ই-সিগারেটে। ধূমাপানকারীরা বলছেন, ধূমপান ছাড়াতে ই-সিগারেট একটি উত্তম সমাধান। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে এটি সহজ পদ্ধতি।

ই-সিগারেটে কি ঝুঁকি আছে ?

সাধারণ সিগারেটের মতোই ই-সিগারেটে আছে নিকোটিন। যা মস্তিষ্কের মধ‌্যে স্নায়ুতে উদ্দীপকের কাজ করে। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে বেড়েছে ই-সিগারেটের জনপ্রিয়তা। তবে বেশকিছু দেশে ইতিমধ‌্যে এ সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, এ ধরনের ধোঁয়া গ্রহণ বা ভ্যাপিং শরীরের ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে পারে।

ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন তারুণ‌্য

নিজেকে স্মার্ট ও আধুনিক ভেবে বাংলাদেশের অনেক তরুণ জড়িয়ে পড়ছে ই-সিগারেটের নেশায়। ছড়িয়ে পড়েছে প্রত‌্যন্ত অঞ্চলেও। বাদ যায়নি রংপুরের তরুণরাও। অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইটে তরুণ প্রজন্ম মনকাড়া ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হচ্ছে। অনেকে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এ নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণ সিগারেটের নেশার বিকল্প, ক্ষতি কম হওয়ার আশা কিংবা নিজেকে স্মার্ট ধূমপায়ী ভেবে তরুণ প্রজন্ম আজ এ নেশায় বেশি আসক্ত হচ্ছে।

রংপুরে বিশ্ববিদ‌্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ‌্যে একটা বড় অংশ ধীরে ধীরে এ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। জেলা পরিষদ মার্কেট, সুপার মার্কেট, রাজা রামমোহন মার্কেট, রংপুর সিটি বাজার, লালবাগ বাজার, চক বাজারসহ শহরের বেশকিছু দোকানে ই-সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের একটি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দামের ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। সেখান থেকে একটি পছন্দ করি। অর্ডার দেই। দুই-তিন দিনের মধ্যে হাতে পেয়ে যাই ই-সিগারেট। তখন থেকেই আমি এর প্রতি আসক্ত।’

রংপুরের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইদানীং মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ই-সিগারেটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ই-সিগারেটে আসক্ত শিক্ষার্থী আবরার (ছদ্মনাম) বলেন, ‘ধূমপান ছেড়ে দেয়ার বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট ধরি। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় আমার ক্রনিক কাশি হয়। ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা খুলে বলি। ডাক্তার আমাকে ই-সিগারেট ছাড়ার পরামর্শ দেন। তারপর ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দেই। আমি এখন সুস্থ আছি।’

তারিক নামে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, রংপুর সুপার মার্কেটের একটি দোকান থেকে ই-সিগারেট ক্রয় করে তিনি এই নেশার যাত্রা শুরু করেন।

ই-সিগারেট : স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ

রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘কখনই ধূমপানের বিকল্প ই-সিগারেট হতে পারে না। এটা স্বাস্থ্যের জন‌্য খুবই ক্ষতিকর।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, ‘ই-সিগারেটের ক্ষতিকর এই নেশা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করার জন‌্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব খোঁজ-খবর নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, ‘সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যারা এটি ব্যবহার করছেন, তাদের ফুসফুসে নানা ধরনের সমস‌্যা হতে পারে। সাধারণ সিগারেটের চেয়ে এটিতে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। তাই এটি আমদানি বন্ধ করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ই-সিগারেটের প্রধান উপকরণ নিকোটিন। যা থেকে দ্রুত আসক্তি তৈরি হয়। সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ। সাধারণ সিগারেটের চেয়ে এটি ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি ক্ষতিকর।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে এটির প্রচার বাড়ছে। তরুণ সমাজ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে মাদকের মত এটিও সমাজে বিষবৃক্ষ হয়ে উঠবে।’



রংপুর/নজরুল/ইভা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়