ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গোয়েন্দা নজর এড়াতে কৌশলী পরিকল্পনা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোয়েন্দা নজর এড়াতে কৌশলী পরিকল্পনা

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়ংকর হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন যেন রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠেছিল জঙ্গিরা। তাদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ নিহত হন ২২ জন। ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় এরকম একটি হামলা হবে তা কেউ কল্পনাও করেনি।

সে দিনের সেই ভয়ংকর হামলার চিত্র ফুটে ওঠে পুলিশের দেয়া চার্জশিটে। ওই চার্জশিটের আলোকে ঘটনার বিশদ রাইজিংবিডি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মামুন খান। ধারাবাহিক বর্ণনার আজ চতুর্থ পর্ব।

কৌশলী পরিকল্পনায় গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। আর এ হামলার ছক তৈরি করা হয় গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়া বাজারস্থ কলেজ মোড় সংলগ্ন সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও বাইক হাসানের ভাড়া বাসায়।

মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা গৃহীত হয় কয়েক স্তরে। হামলার পরিকল্পনার প্রথম অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বোনারপাড়া বাজারস্থ ভাড়া বাসায় তামিম আহমেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, সরোয়ার জাহান, রায়হানুল ইসলাম রায়হান, নুরুল ইসলাম মারজান, শরিফুল ইসলাম খালেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী একত্রিত হয়ে বৈঠক করে।

ওই বৈঠকে তারা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেখানে সিন্ধান্ত হয় এই হামলায় দেশি-বিদেশিদের হত্যার মূল সমন্বয়ের দায়িত্বপালন করবে তামিম আহমেদ চৌধুরী। যা রাজিব গান্ধি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালের মার্চ মাসের দিকে তামিম আহমেদ চৌধুরী ও শরিফুল ইসলাম খালেদ কল্যাণপুরে আসলাম হোসেন র‌্যাশের বাসায় আসে। তখন আসামিরা রমজান মাসে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক এলাকায় একটা বড় ধরনের আক্রমণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। আসলাম তখন তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছে গুলশান বা কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্যে জানতে চায়।

তামিম চৌধুরী জানায়, নব্য জেএমবি সংগঠনটি আর্ন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএস এর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন। তামিম চৌধুরী আরো জানায়, সংগঠনের সিদ্ধান্ত তার নেতৃত্বে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে নিয়ে আক্রমণ করতে হবে। এরপর হলি আর্টিজানে হামলার সিদ্ধান্ত তারাই গ্রহণ করে। হামলার পরিকল্পনায় আসলাম হোসেন র‌্যাশ ও শরিফুল ইসলাম খালেদ সমর্থন দেয়। যা র‌্যাশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন।

চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৬ সালের মে মাসে জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আব্দুস সবুর খান নব্য জেএমবিতে যোগদান করে রমজান মাসের প্রথম দিকে তামিম চৌধুরীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। সংগঠনের হাত ধরে মিরপুর এলাকায় একটি বাসায় ওঠেন। সে বাসায় রাতে তামিম চৌধুরী ও বাশারুজ্জামান চকলেট তাকে আকিদা এবং মানহাজ বিষয়ে ইন্টারভিউ নেয়। তারা সন্তুষ্ট হয়ে সবুর খানকে নব্য জেএমবির শুরা সদস্য মনোনীত করে।

উল্লেখ্য যে, নব্য জেএমবির শুরা সদস্যরাই সব ধরনের হামলার অনুমোদন দিয়ে থাকে। সে হিসেবে তামিম চৌধুরী ও বাশারুজ্জামান চকলেট, সবুর খান ও অন্যরা হলি আর্টিজান বেকারিতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। হামলার জন্য লোক সংগ্রহ, অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহ করার জন্য সবুর খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। থ্রিমা আইডি খুলে ব্লু-স্কাই আইডিতে নব্য জেএমবির মারজান ও হাদিসুর রহমান সাগরসহ অন্যান্য সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে সবুর খান হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা সফল করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে। যা আব্দুস সবুর খান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।


ঢাকা/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়