ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অবকাঠামো দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ছে কুয়াকাটা

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবকাঠামো দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ছে কুয়াকাটা

১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। এখানের একই জায়গা থেকে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখা যায়। এ কারণে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের অন্যরকম আগ্রহ রয়েছে জায়গাটিকে ঘিরে।

তারপরও পর্যটন মৌসুমে ভ্রমণপিপাসু মানুষের তেমন আনাগোনা দেখা যায় না এখানে।

কারণ খু্ঁজতে গিয়ে দেখা গেল, দুর্বল অবকাঠামো, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনিরাপত্তাসহ নানা কারণে কুয়াকাটায় আসতে পর্যটকরা আগ্রহ দেখান না।

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবুও যোগাযোগ এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতায় কুয়াকাটা পর্যটন হিসেবে পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।

কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারের মতো এখানেও পর্যটক থাকত। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অবকাঠামো। এ কারণে অনেকে আসতে চান না। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও পর্যটকদের অনিহার একটি কারণ।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে যে ধরনের অবকাঠামো আছে এখানে তা নেই। এ কারণে কক্সবাজারে পর্যটক বেশি। কুয়াকাটা ওই জায়গায় যেতে আরো সময় লাগবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সৈকতে নিয়মিত টহল দেওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেন পর্যটকদের সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার না করতে পারে এবং বাড়তি মূল্য না নেয় সে বিষয়ে তাদের কাউন্সিলিং করা হয়। রাতে অনেকে সৈকতে থাকতে চান। তাদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সৈকতে নিয়মিত থাকে।

কুয়াকাটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল ছাড়া ভালো মানের হোটেল নেই বললেই চলে। আবার পর্যটন করপোনেশনের হোটেল ছাড়া অন্য কোনো হোটেলে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এমনি অনেক হোটেল আছে যেখানে রুমের সঙ্গে সংযুক্ত ওয়াশরুম নেই। এ কারণে অনেকে থাকতে অনীহা প্রকাশ করেন।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা ফরহাদুজ্জামান বলেন, হোটেলগুলোর মান ভালো না। সার্ভিসেও পেশাদারিত্ব নেই। আমার মনে হয় একবার কেউ এখানে আসার পর অন্যদের নিরুৎসাহিত করবে।

 

 

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় নামে একজন বলেন, এতো সম্ভবনা! কিন্তু সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। ভালো হোটেল নেই, সৈকত ছাড়া বিনোদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। সড়ক পথে কুয়াকাটা আসতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যায়। লঞ্চে আসলেও ভেঙ্গে আসতে হয়। পর্যটকরা তো এখানে আসতে আসতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে।

স্থানীয়দের সংস্কৃতি প্রদর্শনে নেই উদ্যোগ : 

প্রতিটি এলাকারই কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। পর্যটন স্থানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি ভ্রমণকারীদের সামনে তুলে ধরা হয়। এতে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ওই এলাকা সম্পর্কে জানে এবং ভবিষ্যতে ভ্রমণের আগ্রহ প্রকাশ করে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মগ, চাকমাসহ কয়েকটি নৃগোষ্ঠী পটুয়াখালীতে বসবাস করে। এছাড়া কুয়াকাটার কলাপাড়ায় রাখাইন পল্লী রয়েছে। নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন তাদের ঐতিহ্যবাহী কাপড় তৈরি করেন। এছাড়া তার রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি।

অথচ সৈকতে সামুদ্রিত মাছ ভাজা ও বার-বি-কিউ ছাড়া কুয়াকাটায় নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতির পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এছাড়া পর্যটকদের জন্য আলাদা বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। 

প্রচারণার অভাবে বিদেশি পর্যটকরাও আসেন কম : 

স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুয়াকাটায় বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও নেই। কালেভদ্রে আসেন বিদেশি পর্যটকরা। এর কারণ হিসেবে অবশ্য বিদেশে সরকারি প্রচারণার অভাবকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

সি বিচ রিসোর্টের ম্যানেজার বাবু বলেন, কোনো প্রচারণা নেই। তাই বিদেশিরা খুব একটা আসেন না।

কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের ম্যানেজার কাজল মজুমদার জানান, তাদের গেস্ট হাউজে দেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও গত এক মাসে মাত্র তিনজন বিদেশি পর্যটক এসেছেন। কুয়াকাটায় অন্যান্য হোটেলে এর চেয়েও কম পর্যটক আসেন বলে দাবি তার। 

 

ঢাকা/নূর/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়