ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই গবেষণা, অভাব দক্ষ শিক্ষকের

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ২০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই গবেষণা, অভাব দক্ষ শিক্ষকের

বিশ্ববিদ্যালয় মানে নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন। বলা যায় এটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অনুষজ্ঞ। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোন মানের তার অনেকটা নির্ভর করে গবেষণার ওপরই।

কিন্তু দেশের ৫০ ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গেল বছর কোনো জার্নাল প্রকাশ করেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে উৎসাহী হলেও গবেষণাখাতে অনীহা। যে কারণে, গবেষণাহীন উচ্চশিক্ষা আমাদের কাঙ্খিত ফল বয়ে আনছে না। পাশাপাশি নতুন স্থাপিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই অধ্যাপক।

তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ডিগ্রি অর্জন করাটা যেন মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন উদ্ভাবনের জন্য গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশি বেদেশি জার্নালে প্রকাশের প্রতি মনোযোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো জার্নাল প্রকাশ করেনি। একটি জার্নাল প্রকাশ করেছিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর ২ হাজার ৩৫১টি জার্নাল প্রকাশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দরকার। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও আন্তরিকতা এবং আগ্রহের দরকার আছে। এক্ষেত্রে সরকারের চাইতেও বেশি ভূমিকা প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।

ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোয় কোনো গবেষণা নেই। কর্তৃপক্ষ আগ্রহী নয় গবেষণা খাতে ব্যয়ে। দেখা যাচ্ছে বিল্ডিং বানাচ্ছে, চেয়ার টেবিল, কম্পিউটার কিনছে। জ্ঞান অনুসন্ধানে গবেষণা খাতে ব্যয় নেই।

তিনি বলেন, এখন লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কী তা স্বচ্ছ ধারণা হয়তো অনেকের নেই। বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবণতা হচ্ছে ডিগ্রি অর্জন করা। অভিভাবকরাও এতেই খুশি। বাস্তবে জীবনে গবেষণাহীন উচ্চশিক্ষা আমাদের কাঙ্খিত ফল আসছে না। রেগুলেটরি অথরিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় প্রতি জোর দিতে উৎসাহ দিতে হবে। একই সঙ্গে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদস্থ থাকেন, তারাও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশি বিদেশি জার্নালে প্রকাশের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

ইউজিসি থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ব্যয় করেছিল ৯০ লাখ টাকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৪০লাখ টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ৭৫ লাখ টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় পৌনে দুই কোটি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৭৫ লাখ টাকা, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা প্রায় দশ লাখ টাকা,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৯ লাখ টাকা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করেও নেই কোনো জার্নাল।

এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দেড় কোটি টাকা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৬৫ লাখ টাকা, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫০ লাখ টাকা, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় চার লাখ টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ লাখ টাকা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮ লাখ টাকা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করে, তবে জার্নাল নেই একটিও।

গেল বছরে গবেষণা খাতে এক টাকাও ব্যয় করেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশনাও নেই।

এছাড়া, গত বছর কোনো জার্নাল ছিল না চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কোনো প্রকাশনা এবং গবেষণা ছিল না বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এর বাহিরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করে জার্নাল ছিল ১৩২টি।

তবে চিত্র ভিন্ন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টি গত এক বছরে  গবেষণায় ব্যয় করে ৪৪ লাখ টাকা, জার্নাল প্রকাশ করে ২ হাজার ৩৫১টি।  যা গত বছরে একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ গবেষণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ জাতীয় উদ্যোগ কম দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ সকল কাজের অনুপ্রাণিত করতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে একটি বাধা লক্ষ করা যায়, সেটি হলো- অপর্যাপ্ত বরাদ্দ। বরাদ্দ যেমন বাড়াতে হবে তেমনি দক্ষ শিক্ষকেরও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের নতুন অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রয়েছেন তাদেরকে গেস্ট টিচার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার মানও বৃদ্ধি পাবে।



ঢাকা/ইয়ামিন/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়