ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নেতা কাউছার হত্যা : ভয়ে বিচার চান না স্বজনরা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছাত্রলীগ নেতা কাউছার হত্যা : ভয়ে বিচার চান না স্বজনরা

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাউছার আলী হত্যা মামলার বিচার এক যুগেও শেষ হয়নি।

হত‌্যাকারীদের ভয়ে এখন আর বিচার চান না কাউছারের স্বজনরা। সন্তান হারানোর ব‌্যথা বুকে নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছেন কাউছারের মা-বাবা।

২০০৮ সালের ৪ মার্চ প্রকাশ‌্যে উত্তর শাহজাহানপুরে রাস্তার ওপর অস্ত্রধারীরা কাউছার আলীকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত‌্যা করে।

ওই দিনই নিহতের চাচা আমীর আলী মতিঝিল থানায় মামলা করেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রতন কৃঞ্চ নাথ আটজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

আসামিরা হলেন- এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহাম্মদ মানিক, সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শর্টগান সোহেল, জয় আহাম্মেদ, নাছির উল্লাহ নাছির, আরমান হক বাবু ওরফে কারেন্সী বাবু, জাকির হোসেন রিপন ওরফে পল্টি রিপন, আলী রেজা খান রানা এবং আনোয়ারুল হক সেন্টু।

কাউছার আলীকে হত‌্যার পর থেকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয় তার পরিবারের লোকজনকে। অন‌্য সন্তান হারানোর ভয়ে তার মা-বাবা মামলা করতে প্রথমে রাজি হয়নি। পরে কাউছারের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর সন্ত্রাসীরা তাকেও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তাদের ভয়ে এখন আর বিচারের কথা বলেন না কাউছারের চাচা। 

মামলায় বাদী কাউছারের চাচার যে ঠিকানা দেওয়া সেখানে গিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন তিনি। কথা হয় বাদীর ছেলে ও কাউছারের এক ভাইয়ের সঙ্গে। প্রথমে এ মামলার বিষয়ে কোনো কথা বলতেই চাননি তারা। নতুন করে পরিবারের কাউকে হারাতে চান না। খুনিদের ভয়ে তারা আতঙ্কিত।

তারা বলছেন, হত‌্যাকাণ্ডের এক যুগেই বিচার শেষ হয়নি। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে বা হবে কি না তাও জানি না।

মামলার চার্জগঠনের পর গত সাড়ে তিন বছরে মাত্র ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফাতেমা ইমরোজের আদালতে বিচারাধীন।

সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেছেন ২৩ ফেব্রুয়ারি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কাউছারের এক আত্মীয় বলেন, ‘কাউছার কোনো ঝামেলায় জড়াতো না। রাজনীতি করতে গিয়ে সে বলির পাঠা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে আমাদের ভয় লাগে। কথা বললেই বিপদে পড়তে হতে পারে। তেমন কিছু বলতে চাই না।’ তবে মামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ মামলা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। অন্য আদালতের কয়েকটি মামলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।

পলাতক ছয় আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী সাহিদা পারভীন বলেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউ আসামিদের দেখেননি। কাউছারকে গুলি করে মারা হয়েছে। কে বা কারা মেরেছে কেউ বলতে পারছে না। সিআইডি সন্দেহ করে, অনুমানের ওপর নির্ভর করে চার্জশিট দিয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, নিহত কাউছার আলী শাহজাহানপুর এলাকায় স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ফলে এলাকায় তার প্রভাব ছিল। পাশাপাশি তিনি শাহজাহানপুর এলাকায় ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার আগে এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ  করতো ওই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক ও তার দলের লোকজন।

মানিক পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। পরে সে ভারতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন কাউছার। ফলে মানিকের সঙ্গে তার শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে। ঘটনার চার পাঁচ মাস আগে মানিকের সঙ্গে শর্টগান সোহেল, কারেন্সী বাবু, নাছির, পল্টি রিপন, সেন্টুদের সাথে একাধিকবার সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। মানিকের নির্দেশ মতে তার দলের লোক জয় ভারতে যায়। এরপর মানিকের সঙ্গে জয় পরামর্শ করে দেশে এসে লোকজন নিয়ে কাউছারকে হত্যা করে।  

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। তবে আলী রেজা খান রানার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় হয়রানীমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আলী রেজার মামলা সরকার না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল তার নাম প্রত্যাহার করার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিটভূক্ত ৩০ সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আরমান হক বাবু বাদে বাকি ছয়জনই পলাতক। আরমান চার বছর ধরে পলাতক ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। এ বিষয়ে তার আইনজীবী তানজির হোসেন বলেন, ‘আরমান ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। পলিটিক্যাল ইনভলভমেন্টের কারণে হয়রানি করতে তাকে আসামি করা হয়েছে।


ঢাকা/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়