ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

পাপিয়ার বার্ষিক আয় মাত্র ৩ লাখ টাকা!

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাপিয়ার বার্ষিক আয় মাত্র ৩ লাখ টাকা!

যিনি ফাইভ স্টার হোটেলে তিন কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করতে পারেন, যুবলীগের বহিষ্কৃত সেই নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার বার্ষিক আয় মাত্র তিন লাখ টাকা। আর সম্পদ আছে মাত্র ১৮ লাখ টাকার।  জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয়কর বিবরণীতে এমনই হিসাব দেখিয়েছেন তিনি।

অথচ তার বাসায় অভিযানে পাওয়া গেছে, নগদ ৫৮ লাখ টাকা, বিভিন্ন দেশের মূদ্রা ও ১০ এটিএম কার্ড।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পাপিয়া কর অঞ্চল-১০ এর আওতায় নিয়মিত আয়কর নথি জমা দেন।  পাপিয়ার ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দাখিল করা আয়কর বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা। আর মোট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।  আয়কর বিবরণীতে তিনি শুধুমাত্র নরসিংদীর কেএমসি এন্টারপ্রাইজকে তার সম্পত্তি ও আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাতীয় বাজেটের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী নারীদের ও ৬৫ বয়সের ব্যক্তিদের করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা। করমুক্ত সুবিধা নিতে তিনি আয় কম দেখিয়েছেন। অন্যদিকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে নরসিংদীর প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংক লিমিটেডে অর্ধ ডজন ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ লাখ টাকা জমা আছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পাপিয়ার অঢেল সম্পদের হিসাব মিলাতে হোটেল ওয়েস্টিন ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ডোম-ইনো বরাবর চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

গত ২ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজের সই করা তলবি চিঠিতে চাহিদাকৃত নথিপত্র ৮ মার্চের মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে হোটেল ওয়েস্টিন থাকা ও খাওয়ার বিলের কপি, বিভিন্ন সময় হোটেল বুকিংয়ের নথিপত্র ও কার কার নামে রুম বুকিং করা হয়েছে, সেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়।

টানা ৪ মাস ৯ দিন গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের চারটি কক্ষ (একটি প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটসহ) ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হোটেলটির কক্ষ ভাড়া, খাবার, আনুষঙ্গিক খরচসহ তিনি মোট বিল পরিশোধ করেছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করেছেন আড়াই লাখ টাকা। র‌্যাবের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এই তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ডোম-ইনোর এমডি বরাবর পাঠানো আরেক চিঠিতে পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসার বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফার্মগেটের ২৮ ইন্দিরা রোডের ‘রওশন্’স ডমিনো বিলিভো” বিলাসবহুল ভবনে বসবাস করতেন। যেখানে তার ও স্বামীর নামে দুই ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।

বিদেশে অর্থ পাচারসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ পাচার এবং কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘পাপিয়ার সম্পদ, সেসবের উৎস, ক্ষমতা, বিদেশে অর্থ পাচার সবই অনুসন্ধানের আওতায় আছে। পাপিয়ার আশেপাশে যারা ছিল, তাদের দিকেও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে। তার সহযোগীরাও আইনের আওতায় আসবে।’

এর আগে পাপিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে র‌্যাব। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়া ওরফে পিউসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বাকিরা হলো, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা।

এরপর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পায় র‌্যাব। র‌্যাবের অভিযানে ফার্মগেটে ইন্দিরা রোডে এই দম্পতির বাসা থেকে পিস্তল, গুলি ও গুলির ম্যাগাজিন, বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

 

ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়