গুলিস্তানে খাবারের জন্য ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি যত গড়াচ্ছে ততই ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার বাড়ছে। এসব মানুষ খাবার না পেয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছেন।
সম্প্রতি রাতে রাজধানীর গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক দ্বীপ ও বিভাজকের ওপর জটলা পাকিয়ে বসে আছেন ছিন্নমূল মানুষরা। ছবি তুলতে চাইলে, এক নারী চিৎকার করে বলেন, মামা, ছবি তুলে কী হবে। পেটে তো খাবার নাই। কিছু খাবার দেন।
ওই নারীর নাম শিউলি। তিনি তিন সন্তানের জননী। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাদের ফেলে রেখে চলে গেছেন।
শিউলি বলেন, কাল রাত থেকে কিছু খাইনি। ছোট তিনটা বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। একজন বাবু এসে দুপুরে কিছু খাবার দিয়ে গেছেন। আমি নিতে পারিনি। মানুষের ভিড়ে ছিটকে পড়ে যাই। খাবারের জন্য বাচ্চাগুলোর কান্না সইতে পারছি না।
আরেকজন বলেন, ঘর না থাকলে ফুটপাতে ঘুমানো যায়। কিন্তু খাবার না খেয়ে তো আর থাকা যায় না। পেটের জ্বালায় মরে যাচ্ছি। পানিও পাচ্ছি না।
মাজারের পাশে গিয়ে দেখা যায়, গাদাগাদি করে বসে আছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধরা। সামান্য খাবার নিয়ে তারা কাড়াকাড়ি করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই সারা দিন না খেয়ে আছেন। অভুক্ত এসব মানুষদের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নেই। যাকেই দেখছেন, খাবারের জন্য তার কাছেই ছুটে যাচ্ছেন। কিছু পথচারী তাদের সাহায্যও করছেন।
এ সময় অপর এক নারী বলেন, খুব কঠিন সময় যাচ্ছে। আগে এরকম সময় জীবনে আসেনি। কী করে বাঁচব? কোনো খাবার কপালে জুটছে না। বড়লোকরা তো ঘরে বসে আছে। আমরা খাবার পাব কই? কাজ-কাম নাই। একটু সাহায্য পেলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম। দেশে মরার ভাইরাস আসছে, আমাদের না খাইয়ে রাখছে। অন্য সময় মাজারে অনেক মানুষ আসত। তারা আমাদের সাহায্য করত। এখন তো আর কেউই আসে না। আমাদেরও খাবার জুটছে না। কবে যে আল্লাহ এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবেন, তিনিই জানেন।
ঢাকা/মামুন খান/রফিক/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন