ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনায় পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশও। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব খাতে।  করোনার এ প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি দেশের শেয়ার বাজারও।  ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব কোম্পানিগুলোর মুনাফা ও লভ্যাংশে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে প্রতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেশের শেয়ার বাজারে ধারাবাহিক মন্দা অবস্থা বিরাজ করায় গত বছরের জানুয়ারি থেকেই এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ কমাতে শুরু করেছেন বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী।   এ সময়ের মধ্যে তিন-চার মাস ছাড়া অধিকাংশ সময়েই বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের শেয়ার বাজার করোনা আক্রান্ত। এ পরিস্থিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের গতিবিধি অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য বলে মনে করছেন অনেকেই।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ নেই ৪টিতে, বিনিয়োগ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে ৫টিতে এবং বিনিয়োগ কমেছে ২১টিতে। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ব্যাংকের শেয়ারেও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি, বরং কমেছে।

দেশের শেয়ার বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক খাতকে গণ্য করা হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ খাতে বিনিয়োগ তুলনামূলক ঝুঁকি কম। কিন্তু ২০১০ সালে মহাধসের পর থেকেই এ খাতের কোম্পানিগুলো থেকে বিমুখ রয়েছেন সব বিনিয়োগকারী। সর্বশেষ লেনদেন হওয়া ২৫ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের অভিহিত মূল্যের (১০ টাকা) নিচে রয়েছে ৮টির শেয়ার।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে করোনার প্রভাব কতদিন থাকবে তার ওপর নির্ভর করছে শেয়ার বাজারসহ সারা দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি।  তবে বিনিয়োগ আসার বিষয়টি শুধু দেশের করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল নয়, অন্যান্য দেশের করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।  এ মুহূর্তে বিনিয়োগ কতটা কমবে তা নির্ভর করছে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, ফ্রান্স ও ইতালিতে করোনা প্রভাব কতদিন থাকবে। তাদের দেশে করোনা প্রভাব যতদিন থাকবে, ততদিন যেকোনো প্রকার বিনিয়োগ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন‌্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে করোনার প্রভাব দ্রুত কেটে গেলে, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অভিমত, দেশে করোনার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাধারণ ছুটি মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। ফলে কবে নাগাদ শেয়ার বাজারে লেনদেন চালু হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে করোনার প্রভাব স্বাভাবিক হবে কি-না, সে আতঙ্ক ভাবিয়ে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। আর লেনদেন চালু হওয়ার পর ব্যাংকগুলোসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একযোগে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলে শেয়ার বাজার স্বাভাবিক হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রভাবে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কোম্পানিগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ারে ওপর আগ্রহ হারাবেন।  এদিকে করোনার প্রভাব কাটিয়ে কীভাবে মুনাফার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। আর এমন পরিস্থিতিতে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে হিসাব কষছেন বিনিয়োগকারীরা। করোনার প্রভাব দীর্ঘদিন থাকলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হবে, সে বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলছে।

জানা গেছে, বর্তমানে করোনার প্রভাবে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তাই তাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। আর করোনার প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে, তা কেউই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। ধারণা করা যাচ্ছে, করোনার কারণে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে রফতানি নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে চীনের করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে সেখান থেকে কাঁচামাল আমদানিও শুরু হয়নি। ফলে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্য উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয়, এমন দেশগুলোতে যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিতে করোনার প্রকোপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায়, সেসব দেশে রফতানি বন্ধ রয়েছে। ফলে রফতানিতেও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বের বড় বড় বিভিন্ন দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আমাদের অর্থনীতি নির্ভরশীল। তারা যত দ্রুত করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে, ঠিক তত দ্রুত স্বভাবিক হবে আমাদের অর্থনীতি। তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে, আমাদের দেশের রেমিটেন্স ও রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে গেলে পণ্য আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। তবে চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, ফ্রান্স ও ইতালির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হলে, শেয়ার বাজারসহ সবক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।  করোনার প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো যাওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। এজন্য আমাদের মানুষিক প্রস্তুতি থাকার প্রয়োজন রয়েছে।’

এ বিষয়ে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকি রাইজিংবিডিবে বলেন, ‘দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো প্রকার বিনিয়োগে ভাটা পড়তেই পারে। কারণ দেশে বিনিয়োগ বাড়া-কমার সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত।’

জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারি। এর প্রভাব শেয়ারবাজারের ওপর পড়বে। ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো সামনের দিনে যে পরিমাণ মুনাফার প্রত্যাশা করেছিল, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এবার সব কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশের পরিমাণ কমবে।’


ঢাকা/এনটি/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়