ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্ষতি পোষাতে গার্মেন্টস খুলবে বিকেএমইএ, ঝুঁকি নিতে নারাজ বিজিএমইএ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষতি পোষাতে গার্মেন্টস খুলবে বিকেএমইএ, ঝুঁকি নিতে নারাজ বিজিএমইএ

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলছে রোববার (৫ এপ্রিল)। কিছু কিছু কারখানার ছুটি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বলবদ রাখা হলেও, অধিকাংশ কারখানা খুলছে রোববারই। ফলে করোনার ঝুঁকি নিয়ে গত শুক্রবার থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন পোশাক শ্রমিকরা।  অন্যদিকে এ সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরাকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্যভুক্ত গার্মেন্টস মালিকরা।

অন্যদিকে দেশে বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) গার্মেন্টস মালিকরা। তাদের মতে, গার্মেন্টস খাত সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এ বছর এ খাতের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই গার্মেন্টস চালু করে যতটুকু ক্ষতি পোষানো যায়, সেটাই চেষ্টা চলছে। দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে গার্মন্টসগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই করোনার ঝুঁকি কমবে।

এদিকে শনিবার (৪ এপ্রিল) রাতে এক অডিও বার্তায় দেশের সার্বিক পরিস্থিত বিবেচনা করে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক।

সেই বার্তায় তিনি বলেন, ‘কাজের অর্ডার থাকলে পোশাক কারখানা খোলা রাখতে পারবেন মালিকরা। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১১ তারিখ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে আপনাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া সঙ্গত ও মানবিক কারণে কারখানায় উপস্থিত হতে না পারলে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত না করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

শনিবার (৪ এপ্রিল) বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের ১ হাজার ১০৪টি কারখানার ৯৪ কোটি ৭০ লাখ পোশাক পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে, যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)। আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ও পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মঈন রাইজিংবিডিকে বলেন,‘রোববার আমরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলব। তবে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের জন্য তা বন্ধ রাখব। কারণ করোনার প্রভাব এখনো কাটেনি। গার্মেন্টসে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। তাদের দ্বারা করোনা যে কোনো ভাবে সংক্রমিত হতে পারে। তাই আমরা এবং আমাদের আশেপাশের গার্মেন্টসগুলোও আরো এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এখানে  চার থেকে পাঁচটা গার্মেন্টসে সব মিলে প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাই এ বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো গার্মেন্টস শ্রমিকের দেহে করোনা সংক্রমিত হয়, তাহলে তার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের পরিবার আক্রান্ত হতে পারে। তখন এতো বিশাল সংখ্যাক মানুষদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাই আমার মনে হয় এ মুহূর্তে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

তবে গার্মেন্টম বন্ধ রাখার বিপক্ষে মত পোষণ করেছেন বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবিসি নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের চেয়ারম্যান মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা রোববার গার্মেন্টস চালু করব। কারণ সরকার বলেছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলে কলকারখানা চালু রাখা যাবে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই ঝুঁকি হবে বলে মনে করছি না। এক্ষেত্রে আমরা নিরুপায় এবং বিপাকের মধ্যে আছি। আমাদের কিছু প্রোডাক্ট (পণ্য) বায়ার (ক্রেতা) নিতে চায়। অনেক প্রোডাক্টের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। তবে যেগুলো তারা নিতে চাচ্ছিল, সেগুলোও আমরা দিতে পারছিলাম না। তাই আমরা রোববার খুলব। তবে বলতে পারছি না, কতদিন খোলা রাখতে পারব।  প্রয়োজন হলে আবার ছুটি দিয়ে দেব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস (ডাইং) সংশ্লিষ্ট সুইসহ ছোটখাট এক্সেসরিজের দোকান এখনো খোলেনি। যার কারণে আমরা প্রয়োজন বোধে আবার গার্মেন্টস বন্ধ করে দিতে পারি। আর যদি ছোটখাট এক্সেসরিজের দোকানগুলো খোলা থাকে, তাহলে গার্মেন্ট চালু রাখব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি। ইতোমধ্যে আমরা এ বছর ধরেই নিয়েছি, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই গার্মেন্টস চালু করে এ ক্ষতি যতটুকু পোষানো যায়, সেটাই চেষ্টা করছি। যদি তা না করা যায়, তাহলে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া একটিও আর চলবে না। আগামীকাল থেকে যদি গার্মেন্ট চালু করা যায়, তাহলে একটি বায়ারের বাতিল করে দেওয়া ২ লাখ ৬০ হাজার পিসের ক্রয়াদেশ পুনরায় পাঠানো সম্ভব হবে।’


ঢাকা/এনটি/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়