ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সীমিত কর্মসূচিতে সাদপন্থী তাবলিগ, কার্যক্রম নেই জোবায়ের গ্রুপের

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সীমিত কর্মসূচিতে সাদপন্থী তাবলিগ, কার্যক্রম নেই জোবায়ের গ্রুপের

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ওয়াজ-মাহফিল, সভা-সমাবেশ ছাড়াও যেকোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এছাড়া গত ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলছে সাধারণ ছুটি। এরমধ্যেও দেশে নিজেদের দাওয়াতি কর্মসূচি সীমিত আকারে চালাচ্ছেন মাওলানা সাদপন্থীরা। তবে, সাদবিরোধী মাওলানা জোবায়ের গ্রুপ এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। আর প্রশাসন বলছে, তাবলিগের কোনো গ্রুপকেই এই মুহূর্তে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে উভয় পক্ষকেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

জানা গেছে, সাদপন্থীদের দুই শতাধিক সদস্য বেশ কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে বের হন। প্রত্যেক টিমে ৬ থেকে ৭ জন সদস্য রয়েছেন। এসব টিমের মধ্যে কিছু টিম করোনা পরিস্থিতির কারণে পুলিশি বাধায় ফিরে আসে। তারা বাসা বাড়িতে চলে গেছেন। কিছু কিছু টিম বাইরে দাওয়াতি কার্যক্রম না করে বিভিন্ন মসজিদে নিরাপদে রয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদপন্থী গ্রুপের এক শীর্ষ মুরব্বি বলেন, ‘আমাদের কাজ চলছে সরকারি নির্দেশনা মেনে। একেবারেই সীমিত পর্যায়ে। কর্মীরা স্থানীয়দের করোনা সম্পর্কে সচেতন করছেন। তবে, এতে জনগণ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে না। বরং করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে পারছে। সচেতন ও সতর্ক হচ্ছে।’

জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইল (মারকাজ) মসজিদে সাদপন্থীরা ১৫ দিন থাকেন। এরপর জোবায়েরপন্থীরা থাকেন এক মাস। বর্তমানে সাদপন্থীরা রয়েছেন। তারা সেখান থেকে দেশব্যাপী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মুরব্বিদের সঙ্গে শতাধিক বিদেশি মেহমানও রয়েছেন। তাদের রান্নাবান্নাসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতার জন্য রয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক লোক। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক লোক কাকরাইল মসজিদে রয়েছেন। মসজিদের ভেতরে তারা সীমিতভাবে নামাজ, দোয়া ও বয়ানসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া,  গুলিস্তান কেন্দ্রীয় মার্কাজেও সাদপন্থীদের সীমিত পর্যায়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের শীর্ষ এক মুরব্বি।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি মেহমানসহ সবাই সতকর্তার সঙ্গে আছেন। সুস্থ আছেন। ৩/৪ মাস আগে বিদেশিরা এসেছেন। কিন্তু করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা আর নিজ-নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেননি।’ 

এদিকে, করোনার কারণে মাওলানা জোবায়ের গ্রুপ তাদের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে। তাদের ২০০ টিম তাবলিগের উদ্দেশ্যে সারাদেশে গিয়েছিল। অধিকাংশই সদস্যই চিল্লা শেষ করে ফিরে এসেছেন। বাকিদের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সারাদেশে যেন কোনোভাবেই কার্যক্রম চালানো না হয়, সেজন্য তৃণমূলে মাওলানা জোবায়েরের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে, দৈনন্দিন পরিস্থিতি নিয়ে সকালে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন জোবায়েরপন্থী মুরব্বিরা।

তাবলিগের সদস্যদের সচেতনতার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জোবায়েরপন্থী শীর্ষ নেতা আমানুল হক।

এই গ্রুপের আরেক শীর্ষ নেতা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে নিজে নিরাপদে থাকা, অন্যকে নিরাপদে রাখা আমাদের মূল কাজ। এজন্য ঝুঁকি এড়াতে শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তাবলিগের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

জোবায়ের গ্রুপের আরেক নেতা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সবকিছুই সরকারের নির্দেশনা মেনে করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশি মেহমানদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।’

তাবলিগের বিদেশি মেহমানদের আটকেপড়া বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও জেনেছি উভয় গ্রুপের কিছু বিদেশি মেহমান মারকাজে রয়েছেন। তারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই যেন নিরাপদে থাকেন, সে ব্যাপারে প্রশাসন দেখভাল করছে।’

সাদপন্থীদের সীমিত কার্যক্রম সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ধর্মসচিব বলেন, ‘সীমিত কার্যক্রমের কথা তারা নিজেরা যতই বলুন না কেন, তাদের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। এই পরিস্থিতিতে সেই সুযোগও নেই। সব কার্যক্রমই বন্ধ থাকবে।’

ধর্মসচিব আরও বলেন, ‘যে যাই বলুক এই পরিস্থিতে বাংলাদেশে তাবলিগের প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রম নেই। চলতে দেওয়াও হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখভালো করছে।’ তিনি বলেন, ‘তাবলিগের কোনো গ্রুপই যেন কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে জন্য মাঠ-প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়