ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে আর্থিক কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ স্থিতিশীল

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুঁজিবাজারে আর্থিক কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ স্থিতিশীল

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে বিশ্বের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে, একই অবস্থা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও।  আর কয়েক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হওয়া আস্থার সংকট দেখা দেয়, এখন যোগ হয়েছে করোনার প্রভাবে বাজার নিয়ে শঙ্কা।

তারপরও আর্থিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পরিবর্তে স্থিতিশীল রয়েছে, যাকে ইতিবাচক বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে এ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ২টিতে বা ৯ শতাংশ, কমেছে ৪টিতে বা ১৭ শতাংশ, বিনিয়োগ স্থিতিশীল রয়েছে ৭টিতে বা ৩০ শতাংশ এবং বিনিয়োগ নেই ১০টিতে বা ৪৪ শতাংশ। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে আর্থিক খাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগ স্থিতিশীল রয়েছে।

ইতোমধ্যে করোনার প্রভাবে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কোম্পানিগুলোর শেয়ার ও ইউনিট দরের সার্কিট ব্রেকারের ফ্লোর প্রাইসের (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেওয়া পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেই পুঁজিবাজার আবারও চাঙা হবে—এমনটাই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা অবস্থা বিরাজ করায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকেই এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ কমাতে শুরু করেছেন বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী। এ সময়ের মধ্যে তিন-চার মাস ছাড়া অধিকাংশ সময়েই বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজার করোনা আক্রান্ত। এ পরিস্থিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের গতিবিধি অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় দেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না বিদেশিরা। তারা হয়তো বিনিয়োগের আরো ভালো জায়গা খুঁজছেন। বর্তমানে পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা। ফলে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তবে এ মুহূর্তে বিদেশিদের বিনিয়োগ না কমে তা স্থিতিশীল থাকাটা অনেকটাই ইতিবাচক।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে করোনার প্রভাব বিরাজ করছে। সে হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হলেই আবার বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছি।’

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই’র ফেব্রুয়ারি মাসের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় আর্থিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থা বোঝা যায়।

বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি

আইপিডিসি’র বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২.৮৫ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৮৮ শতাংশে।

লংকাবাংলার বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ০.০৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১.৩৮ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪২ শতাংশে।

বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া কোম্পানি

ফেব্রুয়ারি মাসে আর্থিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া শীর্ষ রয়েছে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফিন্যান্স কর্পোরেশন (ডিবিএইচ) । কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ০.৮৫ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪২.০২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১.১৭ শতাংশে।

ফারইস্ট ফ্যাইনান্সে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ০.০১ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ০.০৮ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ০.০৭ শতাংশে।

আইডিএলসি’র বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ০.০৫ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২.২৩ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২.১৮ শতাংশে।

মাইডাস ফাইন্যান্সের বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ০.০৮ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১.৬৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ১.৫৯ শতাংশে।

বিদেশি বিনিয়োগ স্থিতিশীল থাকা কোম্পানি

চলতি বছরের জানুয়ারির মতোই ফেব্রুয়ারিতে বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ০.৩৪ শতাংশ, জিএসপি ফাইনান্সে ২.৭৫ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে ০.০৭ শতাংশ, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে ০.১৯ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্সে ০.১৪ শতাংশ, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সে ১.০৭ ও উত্তরা ফাইন্যান্সে ৩.৯১ শতাংশ বিদেশি স্থিতিশীল বিনিয়োগ রয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ না থাকা কোম্পানি

ফেব্রুয়ারিতে আর্থিক থাতে বিদেশি বিনিয়োগ না থাকা কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি), ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।


ঢাকা/এনটি/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়