ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

করোনা মোকাবিলা: সর্ব দলীয় বৈঠকের সুযোগ দেখছে না আ.লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা মোকাবিলা: সর্ব দলীয় বৈঠকের সুযোগ দেখছে না আ.লীগ

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার যে দাবি উঠেছে, সে বিষয়ে ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সর্ব দলীয় বৈঠক না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ অবস্থান থেকে জনগণের জন্য কাজ করা উচিত বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।

করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে বাম রাজনৈতিক জোট। বিভিন্ন সময়ে বিএনপিও জাতীয় ঐক্য গড়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সর্ব দলীয় বৈঠক কিংবা জাতীয় ঐক্য গড়ার পদক্ষেপে এই মুহূর্তে কোনো ভাবনা নেই আওয়ামী লীগের। বরং দলটির পুরো দৃষ্টি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে। এজন্য সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতেও যাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটির নেতারা মনে করছেন, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠকের সময় বা সুযোগ কোনোটাই নেই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু রাইজিংবিডিকে বলেন, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এসব বিষয় চিন্তা করছে না। এই মুহূর্তে জনগণকে বাঁচানোই আওয়ামী লীগ সরকারের ধ্যান-জ্ঞান। পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে দিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

ঐক্যের ডাকে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সাড়া না দিলেও দলটির মিত্ররা মনে করেন, রাজনৈদিক দল, বিশিষ্ট সামাজিক শক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ‘পরামর্শ সভা’ করতে পারে সরকার। করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা করে তারা বলছেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা যদি তার মতো করে একটি উদ্যোগ নেন তাতে বিভাজন ভুলে সব রাজনৈতিক দলই এক কাতারে আসবে। এক্ষত্রে আওয়ামী লীগই লাভবান হবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সামজিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে এটা করা যায়। সরকার অনেক কিছু করছে, সন্দেহ নেই। সেটা একেবারেই প্রশাসনিক স্তরে কাজগুলো করছে। সমস্যা হচ্ছে, এতে জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা কম হচ্ছে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে একটা আলোচনা হতে পারে।’

‘এটা করলে সরকারেরই বেশি লাভ হবে বলে আমার ধারণা। এত লকডাউন হচ্ছে, এরপরও মানুষ সেভাবে নিচ্ছে না বিষয়টিকে। আমরা তিন মাস সময় নষ্ট করেছি। এখন রোগীর সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। সুতরাং ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসটা জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর দ্বারাই এই উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। যতোই বিরোধ থাক, যতই কথা বলুক বিএনপি বা বাম দলগুলো, যতই সমালোচনা করুক, ডাকলে তারা আসবে’, বলেন মেনন।

তবে সর্ব দলীয় সভা বা জাতীয় ঐক্য গড়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি ‘জাতীয় পরামর্শ সভা’ করার দাবি আওয়ামী লীগের আরেক মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় মূল ভূমিকা রাখছে সরকার এবং প্রশাসন। সুতরাং যেকোনো উদ্যোগ কার্কর করতে হলে, সফল করতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে বসার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, এর বিপরীতে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, এগুলো সবই কার্যকর করা সম্ভব, যদি আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব একটি জাতীয় পরামর্শ সভা করতে পারি।’

‘আমার আহ্বান রইলো আপনার প্রতি (শেখ হাসিনা), আপনি এই মহামারি বা দুর্যোগের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চালাচ্ছেন, সে যুদ্ধে সবাইকে সম্পৃক্ত রাখার জন্য। সবার পরামর্শ গ্রহণ করে, সবাইকে শরিক করানোর জন্য সব রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট সামাজিক শক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ সভা আহ্বান করেন,’ বলেন হাসানুল হক ইনু।

বাংলাদেশ জাসদের শীর্ষ নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘এই দুর্যোগে সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পরামর্শ নিতে পারে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার যে কাজ করছে, এর পাশাপাশি আরো কিছু পরামর্শ আসত। তবে সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উচিত, আগে যার যার অবস্থান থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।’

করোনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে মিত্ররা ইতিবাচক মনোভব দেখালেও সেটি এই মুহূর্তে বিবেচনার সময় নেই আওয়ামী লীগের। বরং যারা সর্ব দলীয় বৈঠকের দাবি তুলছেন তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যারা এসব দাবি করছে, তারা কোনোদিনই বাস্তবভিত্তিক এবং মানুষের কল্যাণের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তারা দলীয় রাজনীতির অন্ধত্বের মধ্যে গুলিয়ে গেছে। এতটাই অন্ধ দলীয় রাজনীতির স্বার্থের জন্য যে, কখন কোন পরিস্থিতিতে কী কথা বলা উচিত বা কী করণীয় তার দায়িত্ববোধটুকু হারিয়ে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এমনিতেই একটা খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই মহামারি মোকাবিলা করতে সাহসের সঙ্গে এবং আন্তরিকভাবে সরকারপ্রধান এবং আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ করে চলেছেন। যখন যে সময়োচিত কার্যকর পদেক্ষপ নেওয়া প্রয়োজন, তিনি তা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। সুতরাং রাজনৈতিক ফায়দা লোটার এই সস্তা স্লোগান যারা সামনে আসতে চায়, তারা কল্যাণমুখী রাজনীতিতে নেই।’

আব্দুর রহমান বলেন, ‘যারা সর্ব দলীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন, তারা এখন পর্যন্ত জনগণের জন্য কী কাজ করেছেন? তারা একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার পর্যন্ত নিয়ে যায়নি। তাহলে জাতীয় ঐক্য করে তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবেন?’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মনে করেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেই যে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, যার যার অবস্থান থেকে সময়ক্ষেপণ না করে সর্বোচ্চটা দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।

তিনি বলেন, ‘এটা ভিন্ন রকমের একটি রোগ। এখন বিভিন্ন দল যে যার মতো কাজ করুক। একসাথে সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য এক জায়গায় যাওয়া যাবে না। সেই পরিস্থিতি নেই। তবে অর্থনেতিক ও সামাজিক বিষয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন।’  

 

ঢাকা/পারভেজ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়