বিনিয়োগে আস্থা বাড়ছে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর
নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুনাফার দিক থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এগিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে অনিয়ম কম। এছাড়া কোম্পানিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (করপোরেট গভর্নেন্স) মেনে চলায় ব্যবসাও ভালো। পাশাপাশি ভালো লভ্যাংশ দেওয়ায় এই খাতের শেয়ারের চাহিদা বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীদের অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের ওপর আস্থা বেশি রাখে।
তবে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি ও করোনার কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তারপরও বছর শেষে ভালো নগদ লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় এই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা।
দেশের উভয় পুঁজিবাজারে মোট ১২টি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে দেশীয় মৌল ভিত্তিসম্পন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানিতেই সাধারণত বিনিয়োগ করেন। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মৌলভিত্তি ভালো হওয়ায় এ কোম্পানিগুলো ঘিরে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেশি। বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানিই শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশানুযায়ী নগদ লভ্যাংশ দেয়। সে কারণে এসব শেয়ারের চাহিদা অনেক বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, বহুজাতিক কেম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফা বা শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গ্লাক্সো স্মিথ ক্লাইন। কোম্পানিটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮৩ টাকা, যা আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫২ দশমিক ৭৫ টাকা। আর ২০১৯ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়া ২৫ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২০৪৬ দশমিক ৩০ টাকায়।
ইপিএস দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ। কোম্পানিটির সর্বশেষ নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৯৩ টাকা, যা আগের বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৬৫ দশমিক ৯৫ টাকা। আর ২০১৯ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়া ২৫ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১২৩৯ দশমিক ৮০ টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রেকিট বেনকিজার। কোম্পানিটির সর্বশেষ তৃতীয় প্রন্তিক প্রতিবেদন অনুসারে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৯৬ টাকা, যা আগের বছর নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৭০ দশমিক ২২ টাকা। আর ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়া ২৫ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩১২৫ দশমিক ৫০ টাকায়। এর আগে ১৯ জানুয়ারি কোম্পোনির শেয়ার দর ছিল ২৯১৪ দশমিক ৯০ টাকা।
এছাড়া, চতুর্থ স্থানে রয়েছে মেরিকো বাংলাদেশ, পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বার্জার পেইন্টস। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাটা সু বাংলাদেশ। নবম অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। দশম অবস্থানে রয়েছে আরএকে সিরামিকস। একাদশ অবস্থানে রয়েছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানি আর্থিক ভালো থাকার কারণে এই খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ একটু বেশি। সে কারণে পুঁজিবাজারে এমন ধরনের আরও কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়া জরুরি।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন মেনে চলে। অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় তাদের অনিয়ম কম।’ বছর শেষে ভালো নগদ লভ্যাংশ পাওয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীরা বেশি ঝোঁকেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা/এনটি/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন