ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনায় দুর্নীতির অনুসন্ধানে কৌশলী দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় দুর্নীতির অনুসন্ধানে কৌশলী দুদক

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটিতেও জরুরি সেবা দিতে মাঠে রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। পিছিয়ে নেই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের কাজে রাষ্ট্রীয় একমাত্র সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দুর্নীতি ধরতে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে সংস্থাটি। ত্রাণ দুর্নীতি ধরতে দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে সবসময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।  সক্রিয় আছে সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিট।  ই-মেইলসহ অনলাইনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কমিশন থেকে জরুরি অনুসন্ধান ও মামলার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।  এরইমধ্যে ত্রাণের দুর্নীতিতে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে দুদক।

এর পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ এগিয়ে নিতে ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।  ঘরে বসে ই-মেইল ও অন্যান্য অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে।  যাতে অফিস খোলার পর আইনি পদক্ষেপ নিতে দেরি না হয়।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগে সারাদেশে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  যেখানে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। এ অবস্থায় হাত গুটিয়ে থাকা যায় না।  এ মুহূর্তে আমরা মূলত প্রশাসনকে সাহায্য করছি। আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতেও মামলা ও চার্জশিট অনুমোদন দিচ্ছি।

চলমান পরিস্থিতিতে দুদকের অন্যান্য অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ স্থগিত বা থেমে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, কোনো কিছু থেমে আছে বলা যাবে না। তুলনামূলকভাবে গতি কম। করোনাভাইরাসের মতো পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের চলাচল একটি বড় সমস্যা। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাইলেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে না। সেকারণে গতি কিছুটা কম, তবে থেমে আছে বলা যাবে না।  এক্ষেত্রে কর্মকর্তারা অনলাইনে ও বাসায় বসে যতটুকু কাজ এগিয়ে নিতে পারে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির সব অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম আগের মতো চলমান রাখা সম্ভব নয়। তবে দুদক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুদকে সম্প্রতি ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দীর্ঘ একটি তালিকা এবং সারাদেশের অন্তত ২৪ হাসপাতাল নির্মাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম চলমান ছিল।  এমন আরও কিছু কার্যক্রম রয়েছে। আপাতত কর্মকর্তারা কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে কিছু কিছু কাজ ঘরে বসে ই-মেইল ও অন্যান্য অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে অফিস খোলার পর আইনি পদক্ষেপ নিতে দেরি না হয়।  তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ত্রাণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত। এক্ষেত্রে দুদক আইনের আওতায় কমিশন থেকে অনলাইনে অনুসন্ধান কিংবা মামলা অনুমোদনের কাজ চলছে। দুদক থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে দুদক আইনের অধীন অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে থেকে কাজগুলো শেষ করা যায়।

ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন রাজনীতিবিদ, আমলা কিংবা ব্যবসায়ীসহ দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।  ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুদকে ১ হাজার ১০০টি অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।  এছাড়া ৩৯৭টি মামলার তদন্ত ও ৩৫৯ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।  যার মধ্যে চলতি বছরে প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ১৩৫টি অভিযোগের অনুসন্ধান, ৪৬টি মামলা দায়ের ও ৪৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।



ঢাকা/এম এ রহমান/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়