ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা মোকাবিলায় দক্ষ জনবলের অভাব

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:০৭, ২২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা মোকাবিলায় দক্ষ জনবলের অভাব

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শনাক্তকরণ পরীক্ষার ওপর। এরপর চিকিৎসা। কিন্তু পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব আছে। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার তাগিদ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে। যাতে চাহিদা অনুযায়ী কাজে লাগানো যায়।

জানা গেছে, করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ কাজ করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। কিন্তু ২০১৮ সালের পর এ পদে কোনো নিয়োগ হয়নি। দেশে ৪ হাজার ২০০ পদের বিপরীতে টেকনোলজিস্ট আছেন ১ হাজার ৫০০ জন।

বাংলাদেশে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘লোকবল সংকট থাকায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের টেস্টিং ক্যাপাসিটি আছে ৫ হাজার। কিন্তু আমরা তো ৩ হাজারও করতে পারছি না। কেন পারছি না? এর কারণ হচ্ছে আমাদের দক্ষ জনবলের সংকট। এ মুহূর্তে বেশি বেশি পরীক্ষার বিকল্প নেই। অনেক টেকনোলজিস্ট পাস করে বসে আছেন। চুক্তিভিত্তিক হলেও তাদের নিয়োগ দিতে হবে। শুধু তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে মাঠে নামাতে হবে। ’

কয়েকদিন আগে দেখা গেছে, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে বসানো ল্যাবে পাঠানো নমুনা বাতিল হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ প্রদ্ধতিতে ত্রুটি ছিলে বলে জানিয়েছে ল্যাব কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ বলেন, ‘তাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এ বিড়ম্বনা হতো না।’

দিন দিন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল দুপুর ৩টা পর্যন্ত দেশে ১৬২ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। অন্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ১৮০ জন।

বিএমএর দফতর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘চিকিৎসক সংকট কাটিয়ে উঠতে ৩৯তম বিসিএস নন-ক্যাডার হিসেবে যারা আছেন, তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। ’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনায় রোগীদের চিকিৎসার বেলায় বয়সে প্রবীণ চিকিৎসকের কথা চিন্তা করা যাবে না। কারণ করোনা ঝুঁকির বেলায় বয়সও একটা বড় বিষয়। অনেকের ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগও আছে। এটা আরও একটা বিষয়। সেক্ষেত্রে করোনার চিকিৎসায় ইয়াং ডাক্তারদের কথা চিন্তা করতে হবে।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত নার্স ৭৩ হাজার ৯১০ জন। তাদের মধ্যে সরকারি চাকরিতে আছেন ৩২ হাজার ৫৮৫ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৬ হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবা দিচ্ছেন প্রায় ৪০ হাজার নার্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, নার্সের ঘাটতি আছে। বর্তমানে দেশে বেকার আছেন ৩০ হাজারের বেশি নার্স।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, আইসোলেশনে থাকা প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেছেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি চিকিৎসক দেওয়ার জন্য। নতুন চিকিৎসক যারা, তাদেরও দিচ্ছি। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’

 

ঢাকা/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়