ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে পুঁজিবাজারের যে ১০ কোম্পানি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে পুঁজিবাজারের যে ১০ কোম্পানি

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়নের অন্যতম হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও)। যে কোম্পানির পিই রেশিও বেশি, সেখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত বেশি। সেদিক বিবেচনায় বর্তমানে পিই রেশিও ভিত্তিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ৪১টি কোম্পানি। এর মধ্যে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে ১০টি। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে থাকা কোম্পানিগুলো হলো- সমতা লেদার, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ইয়াকিন পলিমার, দেশ গার্মেন্টস, কে অ্যান্ড কিউ, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, আজিজ পাইপস, ন্যাশনাল টিউবস, সোনালী আঁশ ও মুন্নু স্টাফলার। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির রয়েছে ৫টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৪টি ও ‘জেড’ ক্যাটাগির ১টি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যে কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে, সেখান থেকে বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে যত সময় লাগবে সেটাই মূলত পিই রেশিও। সাধারণত যেসব কোম্পানির পিই রেশিও ১০ থেকে ১৫ পয়েন্টের মধ্যে থাকে, সেখানে বিনিয়োগ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত বলে মনে করা হয়। আর সে কারণেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) মার্জিন রুলস ১৯৯৯ অনুযায়ী, পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের ওপরে অবস্থান করা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে মার্জিন সুবিধা দিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পিই রেশিও ভিত্তিতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সমতা লেদার। সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে অর্ধবার্ষিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ পয়সা। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর অবস্থান করছে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায়। সে হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই রেশিও ১৩৩৬.২৫ পয়েন্ট, যা বাজারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৭ পয়সা। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর অবস্থান করছে ১৪০ টাকায়। সে হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই রেশিও ৬১৭.৬৫ পয়েন্ট।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইয়াকিন পলিমার। সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে অর্ধবার্ষিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ পয়সা। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর অবস্থান করছে ১১ টাকা ১০ পয়সায়। সে হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই রেশিও ৫৫৫ পয়েন্ট।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশ গার্মেন্টস। সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে অর্ধবার্ষিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ পয়সা। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর অবস্থান করছে ১০৮ টাকা ২০ পয়সায়। সে হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই রেশিও ৪৯১.৮২ পয়েন্ট।

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে কে অ্যান্ড কিউ। সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে অর্ধবার্ষিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৩ পয়সা। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর অবস্থান করছে ২০৯ টাকা ৩০ পয়সায়। সে হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই রেশিও ৩১৭.১২ পয়েন্ট।

এছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের পিই রেশিও ২৬৩.১৬ পয়েন্ট, সপ্তম অবস্থানে আজিজ পাইপসের পিই রেশিও ২৫০ পয়েন্ট, অষ্টম অবস্থানে ন্যাশনাল টিউবসের পিই রেশিও ২১৪.৭৯ পয়েন্ট, নবম অবস্থানে সোনালী আঁশের পিই রেশিও ১৫৪.৯৫ পয়েন্ট এবং দশম অবস্থানে মুন্নু স্টাফলারের পিই রেশিও ১৫৩.৪৪ পয়েন্ট।

এ বিষয়ে সমতা লেদারের হেড অব শেয়ার ডিপার্টমেন্ট রমজান আলী বলেন, আমাদের পিই রেশিও কেন বেশি সেটা বোধগম্য নয়। তবে বিগত কয়েক বছর ব্যবসা খারাপ ছিল। এখন ব্যবসা ভালো হচ্ছে। সে কারণে শেয়ারটিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকতে পারে।

এদিকে দেশ গার্মেন্টোর কোম্পানি সচিব ড. কে মল্লিক বলেন, কোম্পানির পিই রেশিও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়, পরে জানাবো।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মৌলভিত্তি কোম্পানি বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া বিনিয়োগ করে কিছু বিনিয়োগকারী লাভবান হলেও, অধিকাংশরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাই বিনিয়োগের আগে অবশ্যই কোম্পানিটি মুনাফা বা লোকসান, ইপিএস, এনএভি, বিগত বছরগুলোতে লভ্যাংশ দেওয়ার পরিমাণ ও ধারাবাহিকতা ইত্যাদি বিষয় দেখতে হবে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পিই রেশিও যত বেশি থাকবে, সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ তত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কোম্পানিটির আয় অপরিবর্তিত থাকলে এবং সম্পূর্ণ আয় লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করলে ওই শেয়ারে বিনিয়োগ ফিরে পেতে তত বছর অপেক্ষা করতে হবে।


ঢাকা/এনটি/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়