ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পিপলস লিজিংয়ের লোকসানের বোঝা টানছেন বিনিয়োগকারীরা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১১ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পিপলস লিজিংয়ের লোকসানের বোঝা টানছেন বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবসায়ন সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর ১৪ জুলাই থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের শেয়ার লেনদেন বন্ধ রেখেছে। ১০ মাস পার হলেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। ফলে পিপলসের শেয়ার এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

সম্প্রতি পিপলস লিজিংয়ের পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাইকোর্টে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে হাইকোর্ট থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। হাইকোর্ট থেকে সিদ্ধান্ত আসার পরই বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরত পাবেন কি না তা বোঝা যাবে।

মতিঝিলে অবস্থিত কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প পরিসরে কিছু শাখায় দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লেনদেন চালুর বিষয়ে কোর্ট ও বাংলাদেশ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের সম্পদ ও দায় অডিট করে তার রিপোর্ট কোর্টে জমা দিয়েছে। এখন কোর্ট কী নির্দেশনা দেন, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

প্রতিষ্ঠানটির পুনর্গঠনের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সেহেতু যেকোনো সিদ্ধান্ত কোর্ট থেকেই আসবে।’

অন্য বিনিয়োগকারীদের মতোই পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার কিনে লোকসান গুনছেন বিও হিসাবধারী আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানির মামুন হোসেন শামীম এবং প্রিমিয়ার লিজিং সিকিউরিটিজের আব্দুল্লাহ আল ওহাব। দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করবেন ভেবে বেশ কয়েক বছর আগে শামীম ৩০ হাজার ও ওহাব ৭ হাজার ৫০০টি পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার কিনেন। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় কয়েকবার সমন্বয়ও করেছেন। কিন্তু তারপরেও লোকসান থেকে রেহাই পাননি তারা। বর্তমানে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারে শামীম প্রায় আড়াই লাখ টাকা ও ওহাবের ৫০ হাজার টাকার বেশি লোকসান গুনছেন। তারা বলেন, অবসায়ন হলো দুর্নীতির আরেকটি অংশ। আবসায়ন হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিয়োগকারীরা। তাই যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তথ্য মতে, পিপলস লিজিংয়ের ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ার সর্বশেষ ৩ টাকায় লেনদেন হয়। তবে লেনদেন বন্ধ থাকায় হাতে থাকা শেয়ারগুলো লোকসানেও বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ২৩.২১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৮.৬২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ০.১৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬৭.৯৮ শতাংশ শেয়ার।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে পিপলস লিজিংকে অবসায়ন না করে পুনর্গঠন করা উচিত। এজন্য সরকারের কাছে বিশেষ দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের ঘটনায় পুঁজিবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একইভাবে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতসহ সকল জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পিপলস লিজিং বন্ধ না করে পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পরামর্শের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি শিল্প গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

 

ঢাকা/এনটি/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়