ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মৌসুমি ফল বাজারজাত নিয়ে সরকারের যত পদক্ষেপ

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:১২, ১৭ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
মৌসুমি ফল বাজারজাত নিয়ে সরকারের যত পদক্ষেপ

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে দেশব‌্যাপী সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ রাখা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরইমধ্যে কিছু জেলায় রবি ফসল যথাসময়ে বিক্রি করতে না পারায় পচন ধরেছে। তাই আম-লিচুসহ মৌসুমি ফল যথাসময়ে বাজারজাত করতে পণ্যপরিবহন নির্বিঘ্ন, অনলাইন সপসহ বিভিন্নি পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর এক লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এবছর প্রত্যাশিত উৎপাদন ২২ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।

রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে অধিকাংশ আমের ফলন হয়।

লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন দুই লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ লিচুর ফলন হয় রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায়।

কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ১৮ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়।

অন্যদিকে, আনারসের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন চার লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। আনারসের সিংহভাগ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে শনিবার (১৬ মে)   করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের পরিবহণসহ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরা, মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনো হয়রানি তা মনিটরিং, ত্রাণের সঙ্গে আম, লিচুসহ মৌসুমী ফল বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়।

কৃষি মন্ত্রণালেয়র অনুরোধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রযুক্তি নির্ভর আগামী ‘এক শপ’ অ্যাপস চালু করেছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে যার মাধ্যমে সারা দেশের চাষিরা পণ্য বেচাকেনা করতে পারবে। অনলাইনে এবং ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়াদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয়পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো হবে। মধুমাসে বিদেশি ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার কারণে কৃষক শাক-সবজি, তরমুজসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। যা বিক্রি করেছে তারও ভালো দাম পায়নি। ইতোমধ্যে আম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসব মৌসুমি ফল সঠিকভাবে বাজারজাত না করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তাই মৌসুমী ফল নষ্ট না সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

রাজশাহীর পবা উপজেলার আলীমগঞ্জ এলাকার বাগান মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অধিকাংশ বাগান বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী এখন আম ও লিচু পাড়া যাবে। অনেক ফড়িয়া এখান থেকে কিনে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া শুরু করছে। প্রশাসন থেকে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

রাজশাহীর বাসিন্দা ও মৌসুমী ফলের ফড়িয়া মো. শাহ আলম বলেন, ‘ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা হতে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়াদের যাতায়াত ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও মৌসুমি ফল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত ব্যবস্থা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনো হয়রানি করবে না। ১৯ মে আমসহ মৌসুমী ফল নিয়ে ঢাকায় যাব।’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মেঘলা ফলের আড়ৎতার বোরহান হোসেন বলেন, ‘সরকার ১৫ মে থেকে আম বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। আগাম জাতের কিছু ফল আসা শুরু হয়েছে। রাজশাহী, দিনাজপুর থেকে আগামী সপ্তাহ আম, লিচুসহ মৌসুমী ফল ফড়িয়ারা আগামী সপ্তহাহে নিয়ে আসবে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহণ সহায়তাসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘আম, লিচুসহ মৌসুমী ফল বিক্রির জন্য কৃষি পণ্য লকডাউনের বাইরে। তাই বাজারজাত করতে সমস্যা হবে না। এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চাষিরা বাজারে নিতে পারবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা সংকটের সময়ে আম, লিচুসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।’

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আম, লিচু এবং অন্যান্য মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা হবে। মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বহনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহনের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাধ্যমে কোনোরকম হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা হবে। মৌসুমীফল নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

 

ঢাকা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়