‘খাবারই জোটে না, সেমাই-চিনি কিনব ক্যামনে’
এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর কাজলায় বাস করেন জান্নাতুল ফেরদৌস। অভাবের তাড়নায় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে অন্যের বাসায় কাজ করতে পাঠিয়েছেন। আর ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন সাহায্যের আশায়। যাকে দেখছেন তার কাছেই সাহায্য চাইছেন। অবশ্য, বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দুই মাস ধরে তার বাসায় চুলা জ্বলছে না।
শনিবার (২৩ মে) বিকেলে কাজলায় দেখা যায় মা-ছেলেকে। খুব সকালে বেরিয়েছেন সাহায্য পাওয়ার আশায়। কিন্তু ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। উপরন্তু ক্ষুধার জ্বালায় মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে ৯ বছর বয়সী ছেলে সম্রাট। মায়ের বুক ফেটে যাচ্ছে। ছেলের মুখে কী তুলে দেবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না জান্নাতুল ফেরদৌস।
জানা যায়, ২১ বছর আগে চট্টগ্রামের মোটর মেকানিক মাহবুব আলমের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফাহমিদা ও সম্রাট। দুজনের আয়ে সুখেই চলছিল সংসার। কিন্তু মাহবুব আলমের বহুবিবাহে আসক্তির কারণে সেই সুখ আর রইলো না। একে একে ৭/৮টি বিয়ে করেন মাহবুব। স্বামীর সংসার ছাড়তে বাধ্য হন জান্নাতুল। তিন বছর আগে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পাড়ি দেন ঢাকায়। ওঠেন বোনের বাসায়। পরে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।
ঢাকা এসে জীবনটাকে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছিলেন জান্নাতুল। কিন্তু একটা তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিবেশীদের বেদম মারপিটে আহত হয়ে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। আড়াই মাস আগে পোশাক কারখানা থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সেখান থেকে বকেয়া বেতনও তাকে দেওয়া হয়নি। এরইমধ্যে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ফলে আর কোথাও চাকরির জন্য যেতেও পারেননি। উপার্জন না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন পার করছেন তারা।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘ঘরে খাবার নাই। খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। তেমন সাহায্য পাই না। মানুষের কাছে চাইলে কিছু দেয় না। বলে, তোমার বেশভূষা দেখে তো বোঝা যায় না, তুমি কষ্টে আছ। তাদের কেমনে বোঝাব আমার অবস্থা। কত কষ্টে যে আছি। এক দিন পরেই ঈদ। সবাই বাজার করছে। আর আমরা ঈদের বাজার করব কীভাবে? খাবারই জোটে না, সেমাই-চিনি কিনব ক্যামনে?’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ভালো বেতনে চাকরি করতাম। সেই লোভে মাহবুব আমাকে বিয়ে করে। পরে আমাদের ফেলে রেখে চলে যায় সে। এরপর সে একটার পর একটা বিয়ে করতে থাকে। আমি যে বেতন পেতাম মারধর করে এসে নিয়ে যেত। তাই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসি। বাপের বাড়ি গিয়ে থাকব, সে অবস্থাও নাই। ভাইদের অবস্থা ভালো না।’
জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। তাই একটু রোজগারের আশায় মেয়েকে অন্যের বাসায় কাজে পাঠিয়েছেন তিনি।
ঢাকা/মামুন খান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন