ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আম্ফানে ঝরে পড়া আম, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৩ উদ্যোগ

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফানে ঝরে পড়া আম, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৩ উদ্যোগ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঝরেপড়া আমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ৩ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—করোনায় কর্মহীন-অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা ত্রাণের সঙ্গে আমও দেওয়া, আচার-জেলি-রসমালাই-জুসের উপকরণ তৈরি ও বিদেশে রপ্তানি করা। এসব উদ্যোগ সফলতে করতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি  দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোয় ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এবারের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। তবে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে সারা দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ  ঝরে পড়েছে। এতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে, চাষিরা যেন কাঁচা আমের ন্যায্যমূল্য পান, সেই উদ্দেশ্যে  গত ২১ মে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। চিঠিতে রোহিঙ্গা ও কর্মহীন-অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা ত্রাণের সঙ্গে কাঁচা আম দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। 

এছাড়া ঝরেপড়া আম দিয়ে সন্দেশ, রস মালাই, চমচম, আমচুর, নবাবী, চচ্চড়িসহ শতাধিক সুস্বাদু খাবার তৈরিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) সহযোগিতা করবে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও রাজশাহী ফল কেন্দ্র। এসব পণ্যের পাশাপাশি আমকে পাউডারে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে জুসের উপকরণ তৈরি, পাল্প সংরক্ষণ, আমের ফ্রোজেন খাদ্য সামগ্রী, ফ্রেশকাট  তৈরিতেও সহযোগিতা করবে এই দুই প্রতিষ্ঠান।

এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ কাঁচা আম দীর্ঘ সময় (৬-৮ মাস পর্যন্ত) পরিমিত লবণ ও  ভিনেগার মেশানো দ্রবণে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা জানাতে একাধিক টিম বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়েছে। টিমগুলো ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। এসব টিমের প্রতিবেদন পাওয়ার পর কাঁচা আম বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘কাঁচা আম কিভাবে ৬-৮ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে, তা জানাতে একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশেদ ইফতেখার বলেন, ‘কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দেশের বড় কোম্পানিগুলো কাচা আম কেনা শুরু করেছে।  এছাড়া, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ ও বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরির জন্য বিসিকসহ বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে আমরা সহযোগিতা করছি।’

জানতে চাইরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ম্যাংগো বার, ম্যাংগো জুসসহ বিভিন্ন পণ্য জনপ্রিয়। এসব দেশে কাঁচা আম দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে গত ১৬ মে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা আশ্বাস দিয়েছেন, চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য  তারা গত বছরের দ্বিগুণ আম কিনবেন।’

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আম্ফানের তাণ্ডবে ঝরে পড়া আম কিনতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তারা আম চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে সহযোগিতা করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


আসাদ/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়