সীমিত পরিসরে সবকিছু চালু হলেও অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরবে
হাসান মাহামুদ ও আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: ইন্টারনেট
সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে ৩০ মে। করোনার কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় সাধারণ ছুটির কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমেছে। তাই ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস চালুর সিদ্ধান্ত স্থবির অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও চাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
এফবিসিসিআই পরিচালক হাবিব উল্লাহ ডন রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনায় সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রমই স্থবির হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে বিশ্বের প্রতিটি দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ। এই হিসেবে করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর যদি অর্ধেক ক্ষতিও হয় অর্থাৎ জিডিপির ৫ শতাংশও ক্ষতি হয়, তাহলে বাংলাদেশের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। যত কম সময় এই পরিস্থিতি থাকবে ক্ষতির পরিমাণও কম হবে। এসব বিবেচনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এটা সবাই চাইবে।
তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে ব্যবসা বাণিজ্য চালু হলেও অর্থনীতিতে কিছুটা চাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনও দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। দেশে খাতভিত্তিক যে ব্যবসায়ীরা আছেন, তাদের নিয়ে সরকারকে করোনা পরবর্তী বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়া যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তা খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুষম বণ্টন হতে হবে। তা হলে করোনার প্রভাব কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
ধানমন্ডির রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দুই মাস ধরে সব বন্ধ থাকায় পথে বসার অবস্থা। দোকান ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ চালাতে পারছি না। এক পয়সাও আয় নেই। সীমিত পর্যায়ে সব চালু হোক, আপাতত এটাই চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা করবো।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কাজল বলেন, করোনার কারণে অফিস বন্ধ। বাসায় থেকে কাজ করছি। কিন্তু অফিস নানান সংকট দেখিয়ে এপ্রিল মাসের বেতন অর্ধেক দিয়েছে। ব্যয় কিন্তু আগের মতোই হচ্ছে। অফিস চালু হোক এটাই চাই।
গার্মেন্টসকর্মী শিপা আক্তার বলেন, গত দুই মাস ধরে কারখানা বন্ধ। বেতন নেই। এ অবস্থায় বাঁচব কীভাবে। অফিস চালু হলে অন্তত না খেয়ে মরব না।
এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সবকিছু চালু হলে বাড়বে করোনার ঝুঁকি। প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে লকডাউন করার সময় সম্ভবত কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। রোগ প্রতিরোধ ও রোগীর চিকিৎসার জন্য কী কী করা হবে সম্ভবত সে পরিকল্পনা করা হয়নি। সব বন্ধ রাখার ফলে সরকার দেখছে সব স্থবির হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা রোগটি কোন পর্যায়ে আছে তা বিবেচনা করে লকডাউন শিথীল করে দিয়েছে। যখন সংক্রমণ বাড়ছে তখন সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল লকডাউনের। এটি ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে করোনা রোগকে দেশে যত্রতত্রভাবে ছড়ানোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক মানুষ সংক্রমিত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোরোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, সাধারণ ছুটি মানুষকে ঘরে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘরে ভালোলাগে না বলে অনেকে রাস্তায় বের হয়েছেন। ঢাকা থেকে যারা গ্রামে গিয়েছিলেন, তারা গ্রামকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এবার যখন ঢাকা ফিরে আসবেন তখন ঢাকাকে ঝুঁকিতে ফেলবেন।
হাসান/নূর/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন