ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রিজার্ভ থেকে ঋণ: অর্থনীতিবিদরা যেভাবে দেখছেন

শাহ আলম খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রিজার্ভ থেকে ঋণ: অর্থনীতিবিদরা যেভাবে দেখছেন

উন্নয়ন প্রকল্পের জন‌্য বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবনাকে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখছেন।  তারা বলছেন, আইনগত কোনো বাধা না থাকলে সরকার চাইলে এই রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে পারে।  তবে, ঋণের পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলারের মধ‌্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত বলেও মনে করেন তারা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতির মানদণ্ড মেনে ঋণ নিতে হবে।  না নিলে অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।  এ জন্য সতর্কতার সঙ্গে চাহিদা নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা। 

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার নিরাপত্তা দেয়াল হলো বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।  এখানে হাত দেওয়ার আগে ভাবতে হবে, কত মাত্রার ঋণ নেবে, কিভাবে তা শোধ দেবে।  তবে, এই ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই ৪০০ কোটি ডলারের বেশি হওয়া উচিত হবে না।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে রিজার্ভ আছে, তা এক অর্থে অলসই পড়ে থাকছে।  এই অর্থ যদি সরকার ঋণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, ক্ষতির কিছু নেই।  তবে, সুদের হার ও পরিশোধের মেয়াদ কী হবে, কোন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে, তা  আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে  দেখতে হবে।’

তবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।  তিনি বলেন, ‘সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিলেই পারে।  এছাড়া রিজার্ভ হলেও টাকায় কনভার্ট হবে।  আবার টাকার প্রশ্ন উঠলে সরকার কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, কী পরিমাণ নিয়েছে, কত পাবে—এই প্রশ্নগুলো জটিলতা তৈরি করবে। এর বাইরে রিজার্ভ থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার আইনগত দিকও দেখতে হবে।  বিশ্বের কোনো সরকার এখনো এই পথে হাঁটেনি।  এর চেয়ে বরং টাকা ছাপানোর পথ ধরা যেতে পারে।  যা ডলারে রূপান্তরও করা যাবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। রিজার্ভ থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া যায় কি না, কত দেওয়া যেতে পারে—এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।  আমরা সেদিকেই এগোচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, গত ৬  জুলাই (সোমবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  ‘৩ মাসের আমদানি ব্যয় হাতে রেখে রিজার্ভ থেকে বাকি অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ’ বিদেশি ঋণের মতো একই মুদ্রা ও একই সুদের হারে এই অর্থ ব্যবহার করা হলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তাও খতিয়ে দেখতে বলেছেন তিনি। 

এদিকে,  বাংলাদেশ  ব‌্যাংক বলছে, গত ৪ জুলাই রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।  আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেকোনো দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।  

 

শাহ আলম খান/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়