ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাদক চোরাকারবারিদের নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাদক চোরাকারবারিদের নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড

মাকসুদুর রহমান: বিদায়ী বছরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সারাদেশে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে পরিচালিত এ অভিযান অব্যাহত আছে।

এ বছর মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ১২ হাজার মাদকদ্রব্য চোরাকারবারি। দেড় শতাধিক মাদক কারবারি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের  মতে, এই অভিযানের কারণে মাদক চোরাকারবারিদের নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মেট্রো দল ৩৮ মাদক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। এদিন নারায়ণগঞ্জে পাওয়া যায় ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির কারখানা। রাজশাহীতে পুলিশ হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। ২২ ডিসেম্বর সকাল ছয়টা থেকে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাদক সেবন ও বিক্রির দায়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ সময় ২৯৬টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ১শ’ ৯০ গ্রাম ওজনের ২ হাজার ৬৫ পুরিয়া হেরোইন, ৪ কেজি ১০ গ্রাম গাঁজা এবং ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। একইভাবে অন্য সময়ও অভিযান পরিচালনা করে সারাদেশে বিপুল পরিমাণ মদ, গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল ও অন্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তি স্পটে আগের মতো মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় না। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

র‌্যাবের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে ৪ হাজার ৮শ’ ৩৯টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮ হাজার ২২৭ জন মাদক কারবারি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হয়েছে ১০ হাজার ৩১৯ জনের। র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।

অভিযানের কারণে মাদক বিক্রেতাদের ভীত নড়ে গেছে বলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ২০১৮ সালে এ অভিযানের কারণে এখন আর প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে না। সীমিত আকারে যা হচ্ছে তাও শেষ করে দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের কারণে কক্সবাজার জেলার নাফ নদী সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট প্রবেশ একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। র‌্যাব, পুলিশ ও অধিদপ্তরের যৌথ এ অভিযানের কারণে মাদক বিক্রেতারা নানা কৌশল নিয়েছে। তবে তারা আগের মতো আর ব্যবসা করতে পারছে না।’

এদিকে ২৭ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর খসড়া সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। ১৯৯০ সালের আইনটি পুনর্বিন্যাস ও যুগোপযোগী করে নতুন এই আইন করা হয়। নতুন আইনে আলোচিত ইয়াবা ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য। এর রাসায়নিক নাম অ্যামফিটামিন। এ মাদকদ্রব্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বহন, স্থানান্তর ও আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম হলে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। ১০০ গ্রামের বেশি থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। ২০০ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে। তবে সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, অধিকার অথবা গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মাদকের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম হলে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেট্টপলিটন পুলিশের (মিডিয়া) উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, মাদক বিরোধী অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে প্রকাশ্যে আর মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে না। পুরনো সব স্পটও বন্ধ হয়ে গেছে।’

অপরাধ বিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান বলেছেন, দেশের ৭০ লাখ মাদক সেবনকারীর মধ্যে ১০ লাখ রয়েছেন পুরোপুরি আসক্ত। এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে সমাজে অপরাধের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে। আর অভিযানের সুফল পেতে হলে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ডিসেম্বর ২০১৮/মাকসুদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়